
‘প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি দে আমাদের অনেকের শিক্ষক। আমাদেরকে তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন, কিন্তু এখন যখন হাইদগাঁওয়ের (পটিয়া উপজেলা) মানুষ আপনাকে চায় না, আপনি সসম্মানে পদত্যাগ করুন’। চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি দেকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে এমন বক্তব্য দিলেন এক ছাত্রদল নেতা। একই সঙ্গে ওই শিক্ষককে ৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
গত বুধবার (১১ জুন) বিকেলে হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা থেকে এই হুংকার দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল নেতা তারেকুর রহমান তারেক। ওই প্রধান শিক্ষক যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুমকিও দিয়ে রাখেন তিনি।
হাইদগাঁও ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে আয়োজিত ওই প্রতিবাদ সভায় ছাত্রদল নেতা তারেকুর রহমান বলেন, হাইদগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি নির্বাচিত করে, শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে।
ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ নাগরিকেরা প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে অতীতেও মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যানরাও প্রতিবাদ সভা করেছেন; কিন্তু এর কোনো রেজাল্ট পাইনি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বারবার তদন্ত হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদনে নাকি ওনার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায় না।’
তারেকুর আরও বলেন, ‘শুধু শ্যামল মাস্টার নয়, যারা শিক্ষকের আসনে বসে বিদ্যালয়কে ধ্বংস করেছে, তাদের সকলের পদত্যাগ দাবি করছি। না হলে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করব।’
ছাত্রদল নেতা তারেকুর রহমান প্রধান শিক্ষককে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হলে সামনে এর কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি দে বলেন, ‘যে বা যারা প্রতিবাদ সভা করেছে, তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অনভিপ্রেত। মূলত সারা দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে তিনজন গণ্যমান্য ব্যক্তির নাম পাঠানো হয়। এর মধ্যে বিএনপি-সমর্থক মোজাম্মেল হক লিটনের নাম না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এসব করছেন। তাঁরা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক মব তৈরি করে আমার ওপর হামলা করতে এবং পদত্যাগে বাধ্য করতে চান। আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইওএনও) ফারহানুর রহমান বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। এখানে অন্য কোনো কিছুর সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা তারেকুর রহমান বলেন, ‘এলাকার মানুষ স্যারকে চাচ্ছে না। তাই এলাকার মানুষের পক্ষ হয়ে সভা করেছি।’