
দীর্ঘ ৬ বছর পর গত ১৫ মে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই কমিটি প্রকাশের পর থেকেই নবনির্বাচিত সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলকে নিয়ে ময়মনসিংহ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ আমলের ডামি নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই।
জানা গেছে, কমিটি প্রকাশের ৩ দিন পরই গত ১৮ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর নুরুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন একই কমিটির ৬ নেতা। যার অনুলিপি দলের নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের (উত্তর ছাত্রদল) কাছে দেয়া হয়।
নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতির বিরুদ্ধে করা অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন- একই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নাইমুর আরেফিন পাপন, সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুদ আলম (মাসুদুল আলম মাসুদ), নাদিম সারোয়ার টিটু, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুজ্জামান সরকার শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল।
তাদের অভিযোগ, কমিটির সভাপতি গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তথ্য গোপন করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, যারা নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি নন মেট্রিক এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের প্রচারণায় নৌকার পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এছাড়াও যাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে তাকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমি আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করে এখন মাস্টার্স করছি। আমার মতো আরও অনেকেই আছেন যারা অনার্স-মাস্টার্সে পড়াশুনা করছেন। আমাদের পক্ষে তো অন্ডারমেট্রিক নেতৃত্ব মেনে নেয়া কঠিন।
তিনি বলেন, ছাত্রদলের নেতৃত্বে যারা থাকবে, তাদের পড়াশোনা থাকা প্রয়োজন। অথচ নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতির নুরুজ্জামান সোহেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা যৎসামান্য। তাকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে সভাপতি পদে দ্বায়িত্ব দেয়া উচিত।
সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের গ্রামের বাড়ি জেলার গৌরীপুর উপজেলায়। তাকে খুব কাছ থেকে চেনেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুরুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা সত্য।
নুরুজ্জামান সোহেলের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নুরুজ্জামান সোহেল উপজেলার আরকে স্কুল থেকে ২০০৩ সালে প্রথমবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেননি। পরে আরও দুইবার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য থেকে যান তিনি। এতটুকু আমি নিশ্চিত জানি। এরপর শুনেছি, সে ২০১২ সালে কারিগরি বোর্ড থেকে এসএসসি পাস করেছে। আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত না।
আহম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ আরও বলেন, তবে এসএসসি পাস করলেও তো হবে না। যে কমিটিতে অনার্স-মাস্টার্সে পড়াশুনা করা ছেলে-পেলে আছে তারা কীভাবে সোহেলের নেতৃত্ব মেনে নেবে? এর বিষয়টি খুব দৃষ্টিকটুও।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি সুপার এডিট করা। এই ভিডিও দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সরকারের শাসনামলে আমার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। দলের প্রতি আমার আত্মত্যাগ দেখেই আমাকে সভাপতি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অথচ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন।
পড়াশোনা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, আমি ২০০৩ সালের এসএসসি ব্যাচের পরীক্ষার্থী এটা সত্য কথা। পরবর্তীতে আমি ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেছি। এরপর কারিগরি বোর্ড থেকে এইচএসসি পাস করেছি।
এসময় এইচএসসি পাসের প্রমাণপত্র চাইলে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমার বিরুদ্ধে মামলা থাকার কারণে খুব বেশি পড়ালেখা করা হয়নি। এখন আমি অনেক ব্যস্ত।