
সংস্কার না হলে আগের সেই ‘কলঙ্কিত’ নির্বাচনের ইতিহাস আবার ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করিম চরমোনাই।
তিনি বলেন, আমরা দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে আপনাকে (ড. ইউনূস) নিয়ে এসেছিলাম একটা সুন্দর দেশ গড়ার জন্য। আপনার ওপর যে বিভিন্ন রকমের মানসিক নির্যাতন চলছে তা আমরা অনুভব করছি। আপনাকে যে সহজভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না তাও বুঝতে পারছি। আপনি যদি পরাজিত হন তাহলে আমরাও পরাজিত হবো। তবে মাঝপথে আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। এটা আপনি মাথায় আনবেন না।
রোববার (২৪ মে) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার না হয় তাহলে সামনে যে জাতীয় নির্বাচন হবে সেখানে কালো টাকাসহ পেশি শক্তির কারণে নির্বাচনটা প্রভাবিত হবে। ফলে আগের যে কলঙ্কিত নির্বাচনের ইতিহাস সেটা ফিরে আসবে। সেটা পুনরায় হোক তা আমরা চাই না। যে কারণে আমরা বলছি সংস্কার হোক।
তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেউ দাবি করছেন ডিসেম্বর, কেউ বলছেন মার্চ। তবে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ২০২৬ সালের জুনের ৩১ তারিখের পরে তাদের কেউ থাকবেন না। তার সঙ্গে কথা বলে আমাদের ভেতর যে একটা ভয় ছিল তা কেটে গেছে। পাশাপাশি আমরা বলেছি যে বিষয়গুলোতে বিতর্ক সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে আপনারা সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর আগে বক্তব্য রাখেন- জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর প্রমুখ।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ক খোলামেলা কথা বলেছি। তাকে বলেছি অনেক আশা ভরসা নিয়ে জাতি আপনাকে এখানে বসিয়েছে। আপনি সব চক্রান্ত রুখে দিয়ে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। আপনি কোনো রকম ধৈর্য হারা হবে না। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বস্ত করেছি।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা ছিল আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে ফ্যাসিবাদ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, বিপদ এলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। পাশাপাশি আমরা অবাক হয়েছি যে, স্বৈরাচার সরকার হেফাজতের আন্দোলনের সময় হেফাজতের ওপর হামলা করে তাদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত নয় মাসেও এসব মামলা প্রত্যাহার হয়নি। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি- আগামী ছয় মাসের মধ্যে যেন এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি আমরা তাকে এও বলেছি যে, কোরআন সুন্নাহর বাইরে কোনো প্রস্তাবনা বাংলাদেশে পাস হবে না।
‘নারী সংস্কার কমিশন থেকেও নারীদের বিষয়ে যে দাবি জানানো হয়েছে তার পক্ষে লোক সংখ্যা অনেক কম হবে কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের সাধারণ নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের বিষয়টিও নারী সংস্কার কমিশনের বিবেচনায় আনতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের থেকে যে উপদেষ্টারা সরকারে রয়েছেন তারা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।
একটা মহল সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন নুর। তিনি বলেন, আমরা উপদেষ্টাকে বলেছি আপনি সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কাজ করবেন।
করিডরের বিষয়ে আমরা সরকারকে বর্তমানে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি বলে উল্লেখ করে নুর আরও বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে সরকার যেটা বলেছে ডিসেম্বর থেকে জুন সেটা অস্পষ্ট বিষয়। তাই আমরা বলেছি আপনি একটি সুনির্দিষ্ট মাসের কথা বলেন যেই মাসে নির্বাচন হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি কোনো কথা বলেননি উল্লেখ তিনি বলেন, এটা বলার সুযোগও নেই। তবে তিনি এটা স্বীকার করেছেন, সে সময় অনেক নতুন উপদেষ্টা ছিলেন যাদের এখন পারফরমেন্সের ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে।