
টুডে রিপোর্ট
গিরগিটি নাকি রঙ পাল্টাতে পারে মুহূর্তেই। তাই যেখানে সুবিধা সেখানেই নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া মানুষকে ব্যঙ্গ করেই তুলনা করা হয় এই প্রাণীটির সঙ্গে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে শেখ মুজিবকে সেরা ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা উপাধি দেওয়া ব্যক্তি, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ছোট করে ফেসবুকে লিখলেন ‘আজকে শুধুই ধন্যবাদ’। ঠিক দুই বছর পর সেই হাসিনাকে নির্দ্বিধায় ডাকছেন ফ্যাসিস্ট। জামায়াত আমির গোলাম আযমকে ‘সেরা রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে সেই দলেরই দুই সাবেক মন্ত্র্রীকে দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। একদিকে দিল্লিপন্থী হিসেবে সমালোচিত ‘প্রথম আলো’কে নিজের প্রিয় পত্রিকা আখ্যা দিয়ে অন্যদিকে প্রচণ্ড ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সেরা সাহসী মানুষ বলেন তিনি।
দুই নৌকায় সমানতালে পা দিয়ে চলা এই মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুল। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ক্ষমতার ভরসাম্য বুঝে চললেও জুলাই অভ্যুত্থানের শেষ দিকে ঢাবিতে কিছু মিছিলে দেখা যায় তাকে। ৫ আগস্ট সারাদেশ যখন উত্তাল, গুলি আর মিছিলের নগরী, তিনি তখন সেনাসদর থেকে ফেইসবুকে লাইভ করে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে ‘শান্ত থাকা’র আহ্বান করছিলেন। সেনাপ্রধান নাকি তাকে আন্দোলনরত ছাত্রদের ম্যানেজ করার দায়িত্বও দেন।
এরপর নানা জনের দাবির মুখে আসিফ নজরুল জায়গা করে নেন ড. ইউনূসের অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে। তখন থেকেই প্রভাবশালী হয়ে উঠেন তিনি। অনেক অনুষ্ঠানে ড. ইউনুসের পাশাপাশি দেখে তাকে “ড. ইউনুসের বিকল্প” হিসেবে ভাবতেও শুরু করেন কেউ কেউ। সামাজিক মাধ্যমে এসে ‘প্রচণ্ড কাজের চাপে’ থেকেও বিগত কয়েক মাসেই একাধিক বই লেখা ও প্রকাশের (প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা থেকে) ঘোষণা দেন এই ডাকসাইটে উপদেষ্টা।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ভেতরে চালু হয়েছে কয়েকটা সরকার। ইউনুস সরকারকে অকার্যকর করতে শুরু থেকেই চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন উপদেষ্টা। ড. ইউনূসের উদারতার সুযোগ নিয়ে উপদেষ্টাদের কয়েকজন জড়িয়ে পড়েন নিজেদের স্বার্থ বাস্তবায়নে। জানা যায়, সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে ‘সরকারি চাকরি আইন’ র খসড়া অনুমোদন করা হয়। সেখানে সব উপদেষ্টা ‘সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আইনে সম্মতি দিলেও বেঁকে বসেন ড. আসিফ নজরুল। শেষ পর্যন্ত তিনি তার অবস্থানে অটল থাকেন যা অনেককেই অবাক করে।
বিশ্বস্ত সূত্রমতে, ইউনুস সরকারের উপর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের প্রকাশ্যে অনাস্থা প্রকাশের আগেই শুরু হয় নানা কূটচাল। এরই মধ্যে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ একাধিকবার বৈঠক করেন সেনাপ্রধানের সঙ্গে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় ইউনুস সরকার হটানোর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাহ উদ্দিনের একই বিভাগের কয়েক ব্যাচ জুনিয়র আসিফ নজরুলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও চাউর হয় বিভিন্ন মহলে। সেই মতে ওয়াকার-সালাহউদ্দিনের এসব বৈঠকে আসিফ নজরুলকেই পরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ঠিক করা হয়। বলা হয়, এতে পূর্ণ সম্মতি আছে দিল্লীর। এই বিষয়ে সালাহউদ্দিন-আসিফ বৈঠকও হয় বেশ কয়েকবার। সালাহউদ্দিন প্রতিবেশী দেশের ঢাকাস্থ ষ্টেশান চীফের সাথে যোগাযোগও করেন একাধিকবার।
সূত্রমতে , ওয়াকারসহ শীর্ষ জেনারেলের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বিগত আমলের আয়নাঘরসহ নানা কুকর্মের জন্য ফেঁসে যাবেন তাঁরা। বিএনপির একাংশের ধারণা ড. ইউনুসকে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির আজ্ঞাবহ একটি প্রশাসন সৃষ্টি এবং নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় কঠিন হবে । সেক্ষেত্রে আসিফ নজরুলের মতো দিল্লীপন্থি কেউ দায়িত্ব নিলে সেই আশঙ্কা কেটে যাবে ভাল ভাবেই।
সেনা গোয়েন্দাঘনিষ্ট সূত্রের দাবি, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জেনারেল ওয়াকারসহ শীর্ষ জেনারেলরা কোনভাবেই হয়রানির স্বীকার হবেন না, এমন নিশ্চয়তা চান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার । এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেনারেল মঈনের সেনাবাহিনী যেভাবে হাসিনাকে ভুমিধস নির্বাচনী “বিজয়” উপহার দিয়েছিলেন, এমন উপহার বিএনপিকেও দিতে চান জেনারেল ওয়াকার। এমন পরিস্থিতে ‘ ইউনুস ঘনিষ্ঠ’ উপদেষ্টা থেকে কীভাবে “ঘরের শত্রু বিভীষণ” হলেন আসিফ নজরুল এটাই অবাক করেছে অনেককে।