Image description
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যমুনায় সংলাপ ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে ‘জঙ্গি’ কার্ড ব্যবহারের মতোই এখন ‘ভারতীয়’ কার্ডের রমরমা ব্যবহার

‘যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ’। বহুল প্রচলিত প্রবচনটির অর্থ হলোÑ ‘যখন যে ক্ষমতা পায়, সে-ই ইচ্ছামতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে।’ ১৪’শ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা কি ওই প্রবচনের ফাঁদে পড়ে গেলাম? ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। জাতির প্রত্যাশা জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রায় ১০ মাসে কতটুকু এগুলাম? সংস্কার, নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কয়েক দফা বৈঠক এবং সংস্কার-বিষয়ক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর কয়েক দফা বৈঠক হলো। এখনো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা যেন পাটিগণিতের বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওপরে উঠার অঙ্কের গল্পের মতো। বানর যদি ১ মিনিটে ৫ মিটার উঠে এবং পরবর্তী মিনিটে ৪ মিটার নেমে পড়ে তবে ১০ মিটার উঁচু বাঁশের মাথায় উঠতে বানরের কত সময় লাগবে?’-এর মতোই। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দশায় দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের ‘বিষ খেয়ে বিষ হজম’ করতে হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একই দশা। বিদেশিরা নতুন নতুন বিনিয়োগের জন্য নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার অপেক্ষার বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা এখন চরমে। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে।

সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে দেয়া বক্তব্য এবং বিএনপি ও এনসিপির বিপরীতমুখী অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরির প্রতিক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। এরপর নতুন করে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থার। সঙ্কটের সুরাহায় প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করছেন। সঙ্কট উত্তরণ ঘটছে না; বরং ‘যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ’ প্রবাদের মতোই আচরণ করছে ক্ষমতাসীনরা। যারাই ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি করছেন তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। সেটি অনেকটা শেখ হাসিনার ‘জঙ্গি’ টার্গেটের মতো। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাদের ‘জঙ্গি’ তকমা দেয়া হতো; এখন কেউ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেই অন্তর্বর্তী সরকারের লোকজন ‘ভারতপন্থি’ তকমা দিচ্ছে। দেশপ্রেমের নামে ভারতবিরোধী কার্ডের যেন রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে।

ভারত ও দিল্লিতে আশ্রয় নেয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কমন শত্রু। অথচ গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা ঐকবদ্ধ থাকতে পারেনি। তাদের এই বিভেদে একের পর এক সঙ্কট লেগেই থাকছে। রাজনৈতিক সঙ্কটের সর্বশেষ সংযোজন ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন’-এমন খবর। এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় বইছে। ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ’ গুঞ্জন এমন এক সময়ে উঠেছে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নির্বাচন ও তথাকথিত মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে সেনাপ্রধানের কঠোর অবস্থান। সংস্কারের অজুহাতে কয়েকজন উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর ধান্দায় নির্বাচন পেছানোর পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। আবার দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে পর্দার আড়ালে আরাকানকে মানবিক করিডোর দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্রবন্দর বিদেশিদের দেয়ার সিদ্ধান্তে তোলপাড় শুরু হয়। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বেশি হবে এমন বক্তব্য দিয়ে স্টেকহোল্ডারদের প্রভাবিত করেন।

সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সেনাবাহিনী ‘মানবিক করিডোর’ ও সমুদ্রবন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানান। একই সঙ্গে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত মন্তব্য করেন। যদিও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য আসেনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন। তারা তিনজনই জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ। সাক্ষাতের পর নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন’ এমন খবর পেয়েই তিনি যমুনায় দেখা করতে যান।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে রাজনীতিতে আউলা বাতাস বইতে শুরু করে। রাজনৈকি ভাষ্যকাররা বলতে থাকেনÑ প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সিমপ্যাথি পেতে পদত্যাগের কথা বলছেন। তিনি পদত্যাগের কথা বলবেন; রাজনৈতিক দলগুলো তাকে অনুরোধ করবেÑ আপনি পদত্যাগ করবেন না, এমন প্রত্যাশা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘কোনোভাবেই প্রধান উপদেষ্টাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয়া যাবে না’। কারণ তিনি এখন পর্যন্ত যা করছেন তাতে মনে হয় তার আশীর্বাদের ছায়া এনসিপির উপর পড়ছে। বিএনপির এক নেতা স্পষ্ট জানান, আমরা তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি। বিএনপি চায় তিনি সরকারে থেকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যদি না থাকেন তাহলে শূন্যস্থান কখনো খালি থাকে না।

এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে সংলাপের পরামর্শ দেয়া হয়। সঙ্কট উত্তরণে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংলাপের আয়োজন করেন। প্রথম দিন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি সংলাপে অংশগ্রহণ করে। সংলাপ থেকে বের হয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে। তাদের কথায় পরিষ্কারÑ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কোনো দলই ছাড় দেয়নি। প্রধান উপদেষ্টা তার ‘ডিসেম্বর থকে জুনের মধ্যে নির্বাচন’ অবস্থান থেকে সরে আসেননি। যদিও এখনো সংলাপ বাকি রয়েছে। সব দলের সঙ্গে সংলাপের পর হয়তো সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হবে। অথচ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে ‘সব দল একমত’ এমন বার্তা দিলেন। তার এ বক্তব্য অনেকটা ক্রসফায়ারের পর র‌্যাব ও পুলিশের বক্তব্যের মতোই। হাসিনা রেজিমে ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যার পর র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমন বক্তব্য ‘আসামিকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষায় গুলি চালানো হয়’ বক্তব্য দিতো। মূলত প্রেস বিজ্ঞপ্তি আগেই লেখা থাকত। শুধু ক্রসফায়ারে নিহতের নাম পরিবর্তন করা হতো। যমুনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সেই একই বক্তব্য ‘রাজনৈতিক দলগুলো একমত’ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। অথচ বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াত নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যায়, তাদের অভিমতে বিস্তর ফারাক।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো ভূমিকাই ছিল না। উপদেষ্টা পরিষদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা বসেছেন তাদের বেশির ভাগেরই ‘আন্দোলনের সঙ্গে দূরতম’ সম্পর্ক ছিল না। তারপরও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পেয়ে ১৮ কোটি মানুষ আশায় বুক বাঁধেন। আন্তর্জাতিক ইমেজ কাজে লাগিয়ে তিনি দেশে গণতন্ত্র জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেনÑ এটিই ছিল প্রত্যাশা। জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে নিউইয়র্কে তাকে নিয়ে বিশ্বনেতারা যেভাবে উচ্ছ্বাস করেছেন তা জাতিকে মুগ্ধ করেছে। হাসিনা ও ভারত তার উপর মহাখাপ্পা। কিন্তু তিনি দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিলেন? এখনো তো রাজনীতির অবস্থা পাটিগণিতে বাঁশের অঙ্কের মতো। ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে নারী সংস্কার কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনা বেমানান। নারী-বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আলেমরা ঐকবদ্ধ্য হয়ে মাঠে নেমেছেন। অথচ তিনি নির্বিকার। কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনার হেরফের হয়েছে শোনা যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অভিযোগ, তিনি ১০ মাসের শাসনামলেও নিজেকে ‘সবার’ করে তুলতে পারেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমানের ভাষায়Ñ ‘ড. ইউনূস এখনো যেন এনসিপির উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। কথায় কথায় তিনি বলছেন, ছাত্রনেতারা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। বিএনপি চার দিন চেষ্টা করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে না, অথচ এনসিপি নেতারা এক ঘণ্টার নোটিশে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি কি বার্তা দেয়।’ গতকালও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক কিছু নিয়েছেন। নিজের মামলা তুলে নিয়েছেন। জনগণকে তিনি কী দিলেন?

হাসিনা রেজিমে ১৫ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে দিল্লির নীলনকশায় ‘নির্বাচন নাটক’ হয়েছে। এমনকি ২০০৮ সালেও কোন আসনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তার তালিকা নির্বাচনের আগেই করে রাখা হয়েছিল। এখন যাদের বয়স ৩৩ থেকে ৩৫ বছর হয়েছে, তারা জীবনে ভোট দিতে পারেননি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসে রক্ত দিয়েছেন। হাসিনা পালানোর পর নির্বাচনের পথ খুলে গেছে। অথচ কয়েকজন উপদেষ্টার কথাবার্তায় মনে হচ্ছেÑ নির্বাচনের দাবি করাই যেন অপরাধ। যারাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচনের দাবি করলেই তারা ‘ভারতের এজেন্ট’ প্রমাণের চেষ্টা করছেন।

সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে দেয়া বক্তব্য এবং বিএনপির ডিসেম্বরে নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুমোটভাব। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগের দাবি, বিএনপির একজন নেতাকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবির আন্দোলন ও ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার ঘোষণা দেয়ার অস্থিরতায় প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন সামনে চলে আসে। যদিও পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানিয়েছেন ড. ইউনূস থাকছেন। এ অবস্থায় গত ২৪ মে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকের পর একটি বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়Ñ ‘যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকা- অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বক্তব্যের হেতু কি? মানবিক করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত কি জনসম্মুখে তোলা হয়েছে? এইচএসসির কিছু পরীক্ষার্থী সচিবালয়ে প্রবেশ করে পরীক্ষা ছাড়াই রেজাল্ট দেয়ার দাবি জানানোয় তা মেনে নেয়া হলো কেন? এনসিপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে, এনসিপি সমাবেশে আগত মানুষকে প্রচ- গরম থেকে প্রশান্তি দিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন শীতল পানি ছিঁটানো কী বার্তা দেয়? ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলনে নামার কথা বললেই উপদেষ্টাদের কেউ কেউ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন এবং ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধন ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন?’ সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারটি দেশের নাগরিক। ১৭ জন উপদেষ্টা ও বিভিন্নগুরুত্বপূণ পদধারী বিদেশি নাগরিক। ছাত্র-জনতার অভুত্থানে এদের কারোই কোনো অবদান নেই। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো এরা বিদেশি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। আর প্রধান উপদেষ্টা যে এনসিপির নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন; নির্বাচন হলে এদের কোনো অস্থিত্ব থাকবে না। এরা একটি আসনও পাবে না। এমনকি গণমাধ্যমে জামায়াত প্রচারণা পেলেও নির্বাচন হলে জামায়াতের এই হম্বিতম্বি শেষ হয়ে যাবে।’

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গতকালও দেখা গেছেÑ এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে রয়েছেন। সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন সেক্টরে আন্দোলন চলছে। তাদের আন্দোলন ঠেকানোর কি উদ্যোগ নিচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদ? উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছেÑ ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যারা কাজ করবে’। ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার সিদ্ধান্ত কি বিদেশি ষড়যন্ত্র নয়? কেউ কেউ বলেছেন, জনগণ এ সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় দেখতে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই জনগণ কারা? বিএনপি কি জনগণের বাইরে? সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ইউটিউবার ও প্রবাসী কন্টেইনক্রিয়েটর অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্কারের পর নির্বাচনের পরামর্শ দিচ্ছে এবং বিএনপির ডিসেম্বরে নির্বাচন চাওয়ার কঠোর সমালোচনা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রবাসী ইউটিউবার ও কন্টেইনক্রিয়েটার কি দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন? সোশ্যাল মিডিয়ার হুজুগে এখন গোটা বিশ্ব। বিজ্ঞজন থেকে শুরু করে ভাঁড় পর্যন্ত যে কেউ কোনো কিছু পোস্ট দিলে হাজার হাজার কমেন্ট, লাইক পড়ে। তাই বলে ওই জোকারদের অশ্লীল-কুৎসিত বক্তব্য জনমত ধরে নেয়া হবে?

কর্মবিরতি প্রত্যাহার : আন্দোলন স্থগিত করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এর ফলে আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব দপ্তরে পূর্নদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচিও প্রত্যাহার করা হলো।
গত রাত আটটার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তার আগে বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।