
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কেন ঘোষণা করা হচ্ছে না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আজ রোববার (২৫ মে) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় ভার্য়াচুলি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে ও শুনতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।’
তারেক রহমান বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার হয়তো সংকট নেই। তবে অবশ্যই এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না।
তিনি সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলেন, বাজেট পাশের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিষয় নয়। দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে, এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে জনগণ প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে তাদের দাবিদাওয়া শোনার জন্য এই মুহূর্তে কেউ নেই।
তারেক রহমান আরও বলেন, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরনের অজুহাত বা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পলাতক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপশক্তির পুনর্বাসন কঠোর করা সম্ভব। তিনি বিশ্বাস করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ উত্থান মোকাবিলা করা সম্ভব।