Image description

সালাহ উদ্দিন সাহেবকে তুলে নেওয়া ৫-৬ দিন পর আমরা জানতে পারলাম উত্তরার কোত্থেকে তাকে ধরে নেওয়া হয়েছে। এক রাতে আমরা গিয়ে হাজির হলাম উত্তরার সেই বাড়িতে। আমরা মানে আমি আর রোমিও। তখন চারদিকে চাপা আতঙ্ক। আমি ভীতু মানুষ, যাবো কী না দ্বিধান্বিত। রোমিও আশ্বস্ত করে বলল, ‘আমরা হুন্ডা থেকেই নামবো না। দ্রুত কয়েকটা ইন্টারভিউ রেকর্ড করে দৌড় দিব।’

গিয়ে দেখলাম এলাকা মোটামুটি নরমাল। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা বয়ান দিলেন, সেখানে সেদিন যারা ব্যাডমিন্ট খেলছিলেন তাদেরও কাউকে পাওয়া গেল। সবাই দেখেছে র‌্যাবের গাড়ি এসে একটা লোককে নিয়ে গেছে। ঘুরে টুরে এসে নিউজ লিখে দিলাম, র‌্যাবে ধরে নিয়ে গেছে, লোকজন দেখছেও। শঙ্কা থেকে অফিস র‌্যাবের নামটা ফেলে দিল, তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা পুরোটাই রাখা হল।

সেদিন নিউজের জন্য বক্তব্য নিতে নিতেই একজন সাবধান করলেন। নিউজ পাবলিশ হওয়ার পর একজন এক ‘বড় ভাই ‘কে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তারে জিগাইলেই তো সব জানতে পারতেন’। ৫৪ হাজার টাকার চাকরির জন্য এতো রিস্ক নেওয়া ঠিক না, এটাও বললেন তিনি।

বিষয়টা নিয়ে রোমিও আর বার্গম্যান পরে আরও বেশকিছু অনুসন্ধান করেছিল। আমার আর সাহসে কুলোয়নি।

যাই হোক, কয়েকদিন সালাহ উদ্দিন সাহেবকে ভারতে খুঁজে পাওয়ার পর তার পরিবার আমাদের সঙ্গে আর তেমন কথা বলেননি। ফিরে আসা লোকজনের মাঝে অনেক রকম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা থাকে, হয়তো সে কারণে।

তবে ঘটনা কেন ঘটলো সে সম্পর্কে আগ্রহ ছিল। অনেক পরে দায়িত্বশীল একজন অল্প একটু বলেছিলেন। কাছাকাছি রকমের গল্প পরে আরেক পলিটিক্যাল রিপোর্টারের কাছেও শুনেছি। আমি নিশ্চিত নই এ গল্পের বিষয়ে।

তাদের ভাষ্য, সালাহ উদ্দিন সাহেবকে তুলে নেওয়ার পুরো প্রেসক্রিপশনটা এসেছে পাশের কোন দেশ থেকে। তারে ‘খেয়ে দেওয়ার’ প্ল্যান ছিল, কিন্তু এস আলম সাহেব বাগড়া দেওয়ায় সেটা আর করতে পারেননি তারা। পরে তাকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকায় তৎপর এমন কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছিলেন যাতে ওপারের কাগুদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছিল। এদেশে তার রাজনৈতিক বিরোধ তো রয়েছেই। এসব কারণে তাকে নিয়ে প্ল্যান হয়।

তিনি ওপারে কেমন ছিলেন সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। তবে তার পাশে সার্বক্ষনিক ছিল এস আলম গ্রুপ, এটা আমাকে কয়েকজন বলেছেন। এস আলম সাহেবের বন্ধু একটু শানে-শওকতে থাকবেন এ কথা বিশ্বাস করতে আমার কোন আপত্তি নেই।

পরিশেষে: লেখাটা খুব হালকা হয়ে গেল। তখনকার উত্তেজনা আর আতঙ্কটা ঠিক ফুটিয়ে তোলা গেল না। এখন আপনি যাচ্ছেতাই বলতেই পারেন। কিন্তু তখনকার দিনগুলো বাঁচা-মরার শঙ্কা নিয়ে কেটেছে এই লোকগুলোর।

গোলাম মর্তুজা অন্তু