
বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য চায় জামায়াতে ইসলামী। পরস্পরের কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি ও সংঘাত জাতিকে অনিশ্চয়তা দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ও অর্থবহ সংলাপ প্রয়োজন।
এর পাশাপাশি জনগণের আস্থা ফিরানোর জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ জরুরি বলে জামায়াত মনে করে। গতকাল রাজধানীর মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে এসব বিষয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। মজলিসে শূরার এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। মজলিসে শূরার অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। আমরা বিচলিত না হলেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। এজন্য জামায়াত দ্রুততম সময়ে নির্বাহী পরিষদের সভায় মিলিত হয়েছে। আমরা আলোচনার পরে উপনীত হয়েছি যে, সংঘাত এবং কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির মধ্য দিয়ে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া সমীচীন হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সর্বদলীয় ঐক্য ও অর্থবহ সংলাপ। এটার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
জামায়াত আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলাম কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য আহ্বান জানাই। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আশা করি সেই বৈঠকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে। আওয়ামী লীগের নানা ধরনের অন্যায়ের উদাহরণ টানার পর তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে এই পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জন করার ছিল। হয়ত অনেক প্রত্যাশা পূরণও হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে জনগণের মূল জায়গায়গুলোয় অপূরণ থেকে গেছে। দেশে অনেক কিছুই হয়নি। ’২৪ এ নির্মম কায়দায় যা করা হয়েছে তার সাক্ষী বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা টানা ১৫ বছর দুঃশাসন উপহার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি, জাতির মধ্যে যে আশঙ্কা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা জাতি হিসেবে আমরা সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছাতে পারব। ’২৪ এ পরিবর্তন হয়েছে তাতে বিশাল একটা আশা রয়েছে। জনগণ মনে করে বিগত সরকার আমলে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। পরপর তিনটি নির্বাচনে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। একটি ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, আমরা দুটি রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। একটা সংস্কারের ও আরেকটি নির্বাচনের। কিন্তু কোনো রোডম্যাপ আসেনি। আমরা দাবি জানাই, রোডম্যাপ প্রকাশ করা হোক। তাহলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুটি রোডম্যাপ জরুরি।
আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমীর বলেন, বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না। বিচার না হলে অপরাধচক্র বৃদ্ধি পাবে। বিচারের নামে অবিচার আমরা চাই না।
মানবিক করিডোরের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। এটা তাড়াহুড়া করে করা যাবে না। এখন দেশে পার্লামেন্ট নেই। সব পক্ষের সঙ্গে না বসে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল, সিকিউরিটি এক্সপার্টের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়া। চট্টগ্রাম পোর্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের লাইফলাইন এই বন্দর। দেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেনাবাহিনীর নানা কাজের প্রশংসা করে আমীরে জামায়াত বলেন, কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণœ হোক তা চাই না। সেনাবাহিনীকে নিয়ে যেকোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।
তিনি বলেন, পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে দিতে চান। আমরা তার কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই। আমরাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তো জোড় করে এই দায়িত্ব নেন নাই। আমাদের দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা উচিত। আমরা যতোটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সরকার যেহেতু আমাদের সকলের সরকার আসুন আমরা এই সরকারে সহযোগিতা করি। সরকার যদি এই সহযোগিতা গ্রহণ করে তাহলে সমস্যা সমাধান সুন্দরভাবে হবে।