Image description
 প্রণব মুখার্জি নাকি শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, তিনি যেন বাপের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করেন.
এখন আমরা সকলেই জানি, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার বোঝাপড়া করিয়ে দেওয়ার পেছনে প্রণব মুখার্জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নিজের লেখা বই কোয়ালিশন ইয়ার্স-এ প্রণব মুখার্জি নিজেও এ কথা স্বীকার করে গেছেন।
প্রণব মুখার্জির পরামর্শ মতো শেখ হাসিনা কখনোই বাপের ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি। তিনি চেয়েছিলেন দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে এবং এ লক্ষ্যে সফল হয়েছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তিনি কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং সবক্ষেত্রে ভারতের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে নিয়েছিলেন।
প্রণব মুখার্জির পরামর্শ ছিল তার ক্ষমতায় টিকে থাকার মূলমন্ত্র।
কিন্তু শেখ হাসিনা মনে করতেন, নিজের ক্যারিশমায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় টিকে আছেন। ফলে, তিনি যে বাপের কৃতিকে ছাড়িয়ে গেছেন এটা লোকজনের মুখে শুনতে চাইতেন। তার ঘনিষ্ঠ লোকজন তাকে এসব বলতেনও। ‌ এমনকি পাবলিক বক্তৃতায় এগুলো আসতো। একবার কবি নির্মলেন্দু গুণ শেখ হাসিনার মধ্যে শেখ মুজিবকে দেখার বিষয়ে কিছু কথা বলে খুব পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছিলেন।
যাই হোক, শেখ মুজিবের পক্ষে ভারতের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোর নীতি গ্রহণ করে থাকা খুবই কষ্টকর ছিল। কেননা শেখ মুজিবের উত্থান হয়েছিল মুসলিম লীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। উচ্চবংশীয় জমিদার নন্দন হিন্দুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি কলকাতায় রাজনীতি শুরু করেছিলেন। খিদিরপুরের ডক শ্রমিকদের মধ্যে দাঙ্গার জন্য কলকাতার বাবুরা শেখ মুজিবকে দায়ী করেন।
পাকিস্তান আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব নিজে বিহারের শহরে শহরে গিয়ে উর্দুভাষী মুসলমানদেরকে পূর্ববঙ্গে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পাকিস্তান মুসলমানদের নিরাপদ দেশ হবে।
শেখ মুজিবের মনোজগতে ভারত-বিরোধী চেতনা খুবই সক্রিয় ছিল। এবং শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীই হতে চেয়েছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাজউদ্দিন আহমদ মোট তিন বার তার সঙ্গে দেখা করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা না করেই গ্রেপ্তার বরণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তাজউদ্দিন আহমদকে কলকাতায় গিয়ে চিত্তরঞ্জন ছুতারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু তাজউদ্দিন শেখ মুজিবের নির্দেশনা অনুসরণ না করে ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে সীমান্ত অতিক্রম করে বিশেষ বিমানে করে সোজা দিল্লি চলে যান। দ্রুততম সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে প্রবাসী সরকার গঠন করতে সক্ষম হন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব দেশে ফেরার আগেই ভারতের প্রতি বৈরিতা সূচক আচরণ করতে শুরু করেন। ভারতের বিমানে করে দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি সবার আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। সম্ভবত করাচি ও লন্ডনে তিনি ভালোমতোই ব্রিফড হয়েছিলেন।
১০ জানুয়ারি তাকে বহনকারী বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর সবার আগে শেখ মনি তার কাছে পৌঁছান। তিনি নাকি শেখ মুজিবের কানে কানে বলেন, মামা তাজউদ্দিন সব খায়া দিছে।
তাজউদ্দিন যখন তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন, লিডার ওয়েলকাম টু ইনডিপেন্ডেন্ট বাংলাদেশ তখন শেখ মুজিব উত্তর দেন, দেশ কি স্বাধীন হইছে তাজউদ্দিন? পাকিস্তানি সৈন্যদের জায়গায় ইন্ডিয়ান সৈন্য আইনা তুমি বলতেছ যে স্বাধীন হইছে?
অর্থাৎ প্রথম থেকেই ইন্ডিয়ানদের বেজার করে শেখ মুজিব তার রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তিনি যতই ভারত বিরোধী অবস্থানে চলে যাচ্ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে ততই তার দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল।
তিনি দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। ওআইসি সহ মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বাপের এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি। তিনি ভারতের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করেছিলেন। এবং এর ফলে বাংলাদেশের দীর্ঘতম শাসকে পরিণত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।