Image description

পটুয়াখালীতে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ না নিলেও বশির সরদার (৪০) নামের এক মৃত ব্যক্তির নাম শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে মূল ঘটনাটি সামনে এসেছে। 

নিহত বশিরের বড় ভাই নাসির উদ্দিন গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে বশিরের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। 

বশির সরদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের সেকান্দার সরদারের ছেলে। গত বছর ১৫ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার পটুয়াখালীতে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের তালিকা থেকে বশিরের নাম বাতিল ও সরকার থেকে দেওয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিত করার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। 

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, নিহত পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নিয়ে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজল্যুশন করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা এলে বিষয়টি কার্যকর হবে।

চিঠিতে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম দিকে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে আহত হন বশির সরদার। পরে আগস্টের শুরুর দিকে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। কিন্তু সরকারের অনুদান পেতে গণ-অভ্যুত্থানে আহত দেখিয়ে শহীদের তালিকার তার নাম অন্তর্ভুক্ত করায় পরিবার।

পটুয়াখালীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি সজীবুল ইসলাম বলেন, বশিরকে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর সময় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের তথ্য লিপিবদ্ধ করায় পরিবার। পরে পরিবারটিকে জেলা প্রশাসন থেকে ২ লাখ এবং সরকার থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়। একপর্যায়ে এই অনুদানের অর্থ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। 

ওই দ্বন্দ্বের জেরে ২২ জুলাই মূল ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বশিরের ভাই নাসির। এরপর বুধবার জেলা প্রশাসক একটি সভা করে শহীদের তালিকা থেকে বশিরের নাম বাতিল চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠান।

বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন, গত বছরের ৩ জুলাই জেলা শহরের চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে তার স্বামী মারাত্মকভাবে আহত হন। একপর্যায়ে ক্ষতস্থানে পচন দেখা দিলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার চিকিৎসা করাতে অনেক ধারদেনা ও ঋণ করতে হয়েছে। বশিরের মৃত্যুর পর দুই সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। 

পরে নাসিরের প্ররোচনায় সরকারি অনুদান পেতে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় বশিরের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু একপর্যায়ে অনুদানের একটি বড় অংশ দাবি করেন বশিরের মা–বাবা ও ভাই। তাঁদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ দেন। 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বশিরের বাবা সেকান্দার সরদার। তিনি বলেন, বশিরের চিকিৎসা করাতে তিনি পাঁচ লাখ খরচ করেছেন। কিন্তু সরকারের দেওয়া অনুদানের ১২ লাখ টাকা রেবা আক্তার একাই ভোগ করছেন। এ কারণে তাঁর বড় ছেলে নাসির প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে ডিসির কাছে অভিযোগ করেন। 

এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন।