
অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি কোনোটির সঙ্গেই এই শেয়ারবাজারের কোনো সংযোগ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার এই বাজারকে ক্যাসিনোর মতো চালিয়েছে।
শনিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার : দর্শন ও অনুশীলন।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ২০১০-১১ সালে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে পাচার করেছে। শাস্তি না হলে অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
আমির খসরু বলেন, যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি কী, আমি বলব এক নম্বর হলো বিনিয়োগ, দুই নম্বর বিনিয়োগ, তিন নম্বরও বিনিয়োগ। এর বাইরে কিছু নেই। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে বিনিয়োগে জোর দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের অর্থের উৎস হতে হবে ক্যাপিটাল মার্কেট। এখান থেকেই সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়ই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। অথচ আমরা এখন মাত্র চার বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফের পেছনে ঘুরছি। এ অঙ্কটা কোনো দেশের জন্যই বড় কিছু নয়।
বিশ্বে প্রতিবছর ক্যাপিটাল মার্কেটে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার এলোকেশন হয়। এর বড় অংশ আসে সার্বভৌম তহবিল, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। ভিয়েতনাম একাই ৩০০ বিলিয়ন ডলার আকর্ষণ করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ১০০-২০০ বিলিয়ন ডলার আনতে হলে আমাদের বিনিয়োগ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
আমির খসরু বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটকে রাজনৈতিক মালিকানার আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি। বিদেশে থাকা অনেক বিনিয়োগকারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
তারা বাংলাদেশে আসতে চান, তবে একটি ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কেউ ১০ বিলিয়ন, কেউ ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ফান্ড ম্যানেজ করেছেন। তারা অবকাঠামো, উৎপাদন এবং সেবা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। যার মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। শাস্তি না হলে অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়।
তার মতে, টোটকা ওষুধে পুঁজিবাজার ঠিক হবে না। এই বাজারের ধাক্কা পুরো অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এমনকি ওই সময়ে একটি আইপিও আসেনি।
পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, পুঁজিবাজার একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্ল্যাটফর্ম। ‘দিন এনে দিন খাও’ এমন মানসিকতা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যায় না।