
রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ড. খলিলুর রহমানকে অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় দেশে-বিদেশে তার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেশের জনগণের সামনে হাজির করার আহ্বানও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের সময় ড. খলিলের নাম কেউ কখনো শুনেনি। সুসময়ে হঠাৎ করেই তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসে উপদেষ্টা হয়েছেন। দেড় দশকের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে দেশে-বিদেশে কোথাও যার কোনো উপস্থিতি ছিল না, না ছিল কোনো জোরালো বক্তব্য- তার কাছে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত কিনা, এসব নিয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। ফ্যাসিবাদের দেড় দশক ড. খলিল কোথায় ছিলেন? কীভাবে ছিলেন? বিদেশে তার স্ট্যাটাস কী ছিল? ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে তার ভূমিকা কী ছিল? অবশ্যই এ সকল প্রশ্নের জবাব জনগণকে জানাতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, আপনি এমন একজন ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানিয়েছেন দেশের জন্য যার কোনো দৃশ্যমান অবদান নেই। তিনিতো বাংলাদেশের জন্য নন, বিদেশের জন্য কাজ করবেন। মানবিক করিডোর বা চ্যানেল নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশকে অস্থির করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। ড. খলিলের অহেতুক প্রলাপে প্রতীয়মান হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ সুকৌশলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে অনিরাপদ করে তুলতে চায়।
তিনি বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে খলিলুর রহমানের দেয়া বক্তব্যে দেশের জনগণ বিস্মিত-হতবাক, উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ হয়েছে। খলিলুর রহমান তার বক্তব্যে যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবন প্রসঙ্গটি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক।
‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার মতো খলিলুর রহমান বলেছেন- কেবলমাত্র আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে আমাকে যদি বলা হয় আপনি বিদেশি নাগরিক, তাহলে কালকে তারেক রহমান সাহেবকেও সে কথা বলতে হবে। আমাকে ঢিল নিক্ষেপ করলে সেই ঢিল কিন্তু অন্যের উপর গিয়েও পড়তে পারে। তার এই বক্তব্য গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক স্বার্থকতার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ।
তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে যাওয়া ও থাকার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কোন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশে গিয়েছেন, বিদেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন- এ সম্পর্কে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এটা সর্বজনবিদিত যে, ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্মম হত্যা প্রচেষ্টা থেকে পঙ্গু অবস্থায় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে যান। তখন থেকে তিনি তার পরিবারের সাথে সেখানে বসবাস করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ত্যাগের পর তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বহু মিথ্যা সাজানো মামলায় জড়ানো হয়েছিল। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী ক্যাঙ্গারু আদালত তাকে সাজা দেয়। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আদালত মিথ্যা মামলায় প্রদত্ত বেশিরভাগ সাজা বাতিল করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, তারেক রহমান তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের অধীনে পর্যটক, কর্মক্ষেত্র, ছাত্র, বিনিয়োগকারী এবং পরিবার বা শরণার্থী ভিসাসহ ভিসা বিভাগের অধীনে একজন বিদেশি নাগরিকের জন্য যুক্তরাজ্যে স্বল্প সময়ের (ছয় মাস), বর্ধিত সময়ের জন্য বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস করা আইনত বৈধ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ।