Image description

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আরও জোরালো করল বিএনপি । নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকার ভোটের আয়োজন ঠিক কখন , কীভাবে করতে চায় , তার রোডম্যাপ চেয়ে আসছে দলটি । এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সময় ও সহযোগিতা দেওয়ার কথা কয়েক মাস ধরে বলে আসছেন দলের নেতারা । 

এখন তাঁরা মনে করছেন , সরকার ভোটকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য অনেক বিষয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে থাকায় দলের অবস্থান ও কৌশল পুনর্বিবেচনার সময় হয়ে গেছে । ভোট আদায়ে মাঠে সক্রিয় হওয়া ও সরকারের ওপর নানামুখী চাপ - কৌশল নিতে শুরু করেছে দলটি । বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায়ও একই বার্তা পাওয়া গেছে । ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দলের নেতা ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয়ে আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন , ‘ বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট — এ সংকট দূর করার একমাত্র পথ হচ্ছে , অতি দ্রুত নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা । এখানে অন্য কথা বলে লাভ নেই । '

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দেওয়া হলে দলের পক্ষে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলেও জানিয়েছে বিএনপি । গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন , বিএনপির প্রস্তাব ও পরামর্শ উপেক্ষিত হলে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কি না , তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে । মিয়ানমারের রাখাইনে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মানবিক সহায়তা দেওয়ার করিডর তৈরি , চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা , সরকারের ভেতরে জাতীয় নাগরিক পার্টির ( এনসিপি ) হয়ে চাপ সৃষ্টি , আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত থাকা থাকা সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ দিতে গড়িমসিসহ নানা অভিযোগে সরকারকে শর্তহীন সহযোগিতার অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়টি বিবেচনা করছেন বিএনপির নেতারা ।

বিএনপির নেতারা বলছেন , দল আকস্মিকভাবে এই অবস্থান নিতে যাচ্ছে , এমন নয় । দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক কয়েকটি বৈঠকে আলোচনা করে ‘ আগামী দিনে অবস্থা বুঝে কঠোর হওয়ার ' এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি সামনে রেখে এখন এগোতে শুরু করেছে বিএনপি । আগামী জুন ও জুলাই মাসে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার কী কী পদক্ষেপ নেয় , তা দেখে আগস্ট নাগাদ চলতি বছরেই ভোটের দাবিতে প্রয়োজনে জোরেশোরে মাঠে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দল । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

সজীব ভূঁইয়ার ভূমিকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁর ভূমিকা কী হবে , সে বিষয়ে বিএনপি সন্দিহান হয়ে পড়েছে । বিএনপির নেতারা বলছেন , মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের দুই তরুণ সদস্য মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত , এটা সবাই জানে ও বোঝে । উপদেষ্টা পরিষদে তাঁদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে । জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে । ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ইতিপূর্বে অনেকবার দল থেকে তোলা হয়েছে । কাউকে কাউকে উপদেষ্টা পরিষদ ছেড়ে যেতে হবে । খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বলেন , ‘ যেহেতু একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ , তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে , শুধু দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয় ।

রাখাইনে করিডর ইস্যু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড . খলিলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি করেছে বিএনপি । দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন । রাখাইনে মানবিক সহায়তা চ্যানেলের বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে ওঠা প্রশ্নের প্রসঙ্গ তুলে বলেন , “ এখন কেবল আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে যদি আমাকে বলা হয় , আমি বিদেশি নাগরিক , তাহলে তো কালকে তারেক রহমান সাহেবকেও সে কথা বলতে হয় । '

তারেক রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই উপদেষ্টা ‘ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে ' এমন বক্তব্য দিয়েছেন , এ কথা বলে রিজভী অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন । বিএনপির নেতারা বলছেন , আগামী আগস্টে সরকারের এক বছর পূর্ণ হবে । সে সময় প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে ভোটের বিষয়ে কোনো ভালো সংবাদ দেবেন , এমন প্রত্যাশায় সে পর্যন্ত হয়তো বিএনপি আরও একটু সহনশীলতা দেখাতে পারে । কিন্তু তারপর কী হবে , সেটা পরিস্থিতিই বলে দেবে । সরকারের উদ্দেশে গতকাল বিএনপির মহাসচিব বলেছেন , সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যে ঐকমত্য হয়েছে , সেগুলো নিয়ে সনদ তৈরি করবেন । সুতরাং এটা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি কিংবা টানাহেঁচড়া করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে ।