
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে নাকি জাতীয় নির্বাচন। রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ। ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে বসা নিয়ে নাটকীয়তা চলছে কদিন ধরেই। এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ছাত্রদের দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনই করেনি এখনো। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কি এনসিপির দূরত্ব বাড়ছে?
সমসাময়িক রাজনীতির নানান বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।
জাগো নিউজ: নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ২২ জুন শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে আপনারা বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল চেয়ে আন্দোলন করছেন। দল নিবন্ধনের আবেদন করবেন কি না?
সামান্তা শারমিন: আমরা নিবন্ধনের আবেদন করবো।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ইসি পুনর্গঠন না হলে এটা পক্ষপাতদুষ্ট থাকবে। পুরো ইসি বিএনপির কার্যক্রম পালন করে চলছে। আমরা চেষ্টা করেছি সব রাজনৈতিক দল যাতে সেইম ফেইজে থাকে, এটা যেন ইসি নিশ্চিত করে। এগুলো আমাদের প্রতিনিধিদল যখন ইসিতে গিয়েছিল তখন জানিয়ে এসেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি যখন ছিল, তখন আমরা ইসির ব্যাপারে কথা বলেছি। কমিশনার নিয়োগ ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী সব কিছু করা। সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আমরা আগে থেকেই কথা বলছি। এটা পার্টি বা নিবন্ধনের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়। বাংলাদেশের পুরাতন ক্ষমতা কাঠামো বিনষ্ট করে নতুন ক্ষমতা কাঠামোয় আসতে হবে। ইসি পুরোনো সেটআপে চলছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের তোয়াক্কা করছে না। ইসি এখন মানুষের সঙ্গে কানেক্টেড না বিএনপির সঙ্গে কানেক্টেড।
নির্বাচনের পরে তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে কী ধরনের জুলুম চালাতে পারে এটার একটা নিদর্শন তারা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে। সেই জায়গা থেকে যদি বলেন বিএনপির সঙ্গে আমাদের দূরত্ব, তাহলে দূরত্ব
জাগো নিউজ: সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির রাজনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে কি না?
সামান্তা শারমিন: রাজনৈতিক দূরত্ব নির্ভর করে নির্বাচনসহ দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলগুলোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে। বিএনপি কন্টিনিউয়াসলি তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টার দিকে এগোচ্ছে। ইশরাক হোসেনের মামলা কেন্দ্র করে তাদের যে বক্তব্য, কটাক্ষ এবং ছাত্র উপদেষ্টাদের একচ্ছত্রভাবে অ্যাটাক করার যে প্রবণতা, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রশাসনে বিএনপির ক্ষমতা কতটুকু আছে। এর চেয়েও বেশি ক্ষমতা তারা অর্জন করতে চাইছে।
তারা এই পরিমাণ যদি পাওয়ার হাংরি হয়ে ওঠে এখনই, সেটা তো খুবই ভয়ংকর। বলাই বাহুল্য, নির্বাচনের পরে তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে কী ধরনের জুলুম চালাতে পারে এটার একটা নিদর্শন তারা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে। সেই জায়গা থেকে যদি বলেন বিএনপির সঙ্গে আমাদের দূরত্ব, তাহলে দূরত্ব।
জামায়াত ও অন্য দলের সঙ্গে বিভিন্ন দফা-দাবি ইস্যুতে...এটা বিএনপির সঙ্গেও যদি ঐকমত্য হয় তাহলে ওয়েল অ্যান্ড গুড। আমরা চাইবো বাংলাদেশের জন্য যে পরিবর্তনগুলো একেবারে না হলেই নয় সেই পরিবর্তনের জন্য বিএনপিও এগিয়ে আসবে। আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছি কিন্তু বিএনপির কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি না।
জাগো নিউজ: তবে কি জামায়াতের থেকে সাড়া পাচ্ছেন?
সামান্তা শারমিন: জামায়াত নির্বাচনী প্রস্তাবনায় অনেকগুলো বিষয়ে কনসার্ন রেখেছে। বিএনপির সঙ্গে কিছু কিছু মিলবে, তার মানে এই নয় যে জামায়াতের সঙ্গে মিলে আমরা দফা-দাবিগুলো রাখছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল স্বাধীনভাবে তার মতামত উপস্থাপন করবে। তবে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে দলগুলো একত্রিত হতে পারে।
১৫ দিন সময় দেওয়ার পরেও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন হয়নি। ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ দিতে হবে। এটা দ্বিতীয়বার আর হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই
জাগো নিউজ: জুলাই সনদের দাবি তুলেছিলেন, এখনো বলছেন। আশার আলো দেখছেন কি?
সামান্তা শারমিন: জুলাই সনদ অবশ্যই হতে হবে। আমরা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যখন জুলাই সনদের জন্য শহীদ মিনারে কর্মসূচি করেছিলাম এটা তখনই হওয়ার কথা ছিল। সরকার আমাদের আশা দিয়েছিল। ১৫ দিন সময় দেওয়ার পরেও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন হয়নি। ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ দিতে হবে। এটা দ্বিতীয়বার আর হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই।
জাগো নিউজ: আপনারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছেন। সব রাজনৈতিক দল কি আপনাদের সঙ্গে একমত হবে— আর সরকারের কী ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন?
সামান্তা শারমিন: মাঠ পর্যায়ে বা তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের কী অবস্থা, প্রতিনিধি না থাকায় কী ক্ষতি হচ্ছে সরকারকে তার একটা টালি শিট তৈরি করা উচিত। তার একটা বোঝাপড়া জনগণের কাছে উল্লেখ করা উচিত। ঢাকার পরিস্থিতি দিয়ে পুরো দেশের পরিস্থিতি মাপলে চলবে না। ঢাকা রাজনীতির সেন্টার হয়ে যাচ্ছে, এটা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার না থাকার কারণে প্রান্তিক জনগণ অসহায়ত্বের শিকার হচ্ছে। এটাকে ঠিকঠাক করা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ, তাদের এটা ফুলফিল করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অতি দ্রুত প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা যেসব পার্টি উপলব্ধি করতে পারবে তারাই জনগণের পক্ষের পার্টি হিসেবে বিবেচিত হবে।
গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হলে যে বেশি সময় লাগবে এটা একেবারেই ঠিক নয়। বিবেচনার কিছু নেই। যে কোনো সময়ই গণপরিষদ নির্বাচন হতে পারে
জাগো নিউজ: আপনারা গণপরিষদ নির্বাচন চেয়েছিলেন। তার কোনো রোডম্যাপ বা সময় নির্ধারণের দাবি কি জানিয়েছেন?
সামান্তা শারমিন: গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অতিরিক্ত কোনো টাইমফ্রেমের প্রয়োজন নেই। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছিলেন, এখনো সেটা বহাল তবিয়তেই আছে। নতুন কোনো সময়ের ব্যাপারে আমরা আলাপ শুনিনি। সেটা বহাল থাকুক। গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হলে যে বেশি সময় লাগবে এটা একেবারেই ঠিক নয়। বিবেচনার কিছু নেই। যে কোনো সময়ই গণপরিষদ নির্বাচন হতে পারে।
জাগো নিউজ: আপনার কি মনে হয় ডিসেম্বরের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব?
সামান্তা শারমিন: সরকারের সদিচ্ছা, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা এবং উপদেষ্টারা যদি অভ্যুত্থানের স্পিরিট মনে রেখে থাকেন তাহলে এটা সম্ভব।