Image description
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে রাজনীতিতে সুবাতাস

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। কেবল একটি নির্বাচিত সরকার দেশের গতিপথ নির্ধারণ করবে; এমন প্রশাসন নয়, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয় বা জবাবদিহি করতে ইচ্ছুক নয়। বুধবার সেনানিবাসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো। শীর্ষনেতারা বলছেন, দেশের ক্রান্তিকালে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে যে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে তার সময়োপযোগী বক্তব্যে রাজনীতিতে সুবাতাস বইছে। এতে আশাবাদ দেখছেন তারা। দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সেনাপ্রধানের এমন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য খুবই দরকার ছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন। ফলে নির্বাচন কখন হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই- সবাই অপকর্মে জড়িত ছিল না। কিন্তু সবাই উদ্বিগ্ন। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশবাসীর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ জেগেছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি নবনির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। তারা বলছেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে দেশের সার্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে। এ কারণে দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা জরুরি। নেতারা বলছেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য রাজনীতির বাইরেও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, প্রশংসাও পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এ সুযোগে একদিকে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে; অন্যদিকে উপর্যুপরি দাবির আন্দোলনের ফলে দেশে একধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদের কারণেও তৈরি হয়েছে একধরনের অনিশ্চয়তা। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সংকটময় মুহূর্তে সেনাপ্রধান জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন। এই বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। কারণ এই সামরিক বাহিনী দেশে দ্রুতসময়ে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়- এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের সব সমস্যার সমাধান হবে- সেটাই তিনি চেয়েছেন এবং বলেছেন। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে তিনি জাতির সামনে একটা ভালো বক্তব্য রেখেছেন। স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, জাতীয় স্বার্থে স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয়গুলো আসুন সবাই এড়িয়ে চলি। সংকট উত্তরণে ইতিবাচক ভূমিকা কেবল জাতিকে উপকৃত করবে। নেতিবাচক ভূমিকা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দুর্বল রাজনীতির কারণেই সেনাপ্রধান এমন বক্তব্য রেখেছেন। সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইতিবাচক তবে এসবের বাস্তবায়ন কতটুকু হবে তা সরকারের ওপর নির্ভর করছে। জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সেনাপ্রধান আগেও ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। অবশ্য তখন নির্বাচনের বিষয়টি তেমন জমে উঠেনি। বুধবার আবারও যখন ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেন তখন নির্বাচন নিয়ে সিরিয়াস সময়। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য পজিটিভ, আমি স্বাগত জানাই।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল। নির্বাচন নিয়ে যে অস্বস্তি হয়েছে তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে ফুটে উঠেছে। সরকার কীভাবে তার বক্তব্য নেয় তাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সরকার কোনো পক্ষ না হওয়ায় তাদের উচিত সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নিয়ে এক মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার। যখন দেশ বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে তখন সম্মিলিত মতামতের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী তাদের বক্তব্য রাখতে পারে। কিন্তু দেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের একক কোনো বক্তব্য থাকা উচিত নয়। এতে জটিলতা তৈরি হয়। সেনাবাহিনীর উচিত পেশাদারি ধরে রাখা। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন, আমরা সেটিকে সমর্থন করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আমরা এর মধ্যে বিচার ও সংস্কারের কথা বলেছি।