Image description
অর্থনৈতিক সঙ্কট-সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা

এনজিও চালানো আর দেশ চালানো এক জিনিস নয় -প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী
বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম সহায়তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি-ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
রাষ্ট্র-প্রশাসনে যে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থাকা দরকার এ সরকারের তা নেই -সাইফুল হক
নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে সরকারকে সহযোগিতা নয় -ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সংস্কারের ১৬৬টির মধ্যে ১৪৬ প্রস্তাবে সবগুলো দল একমত -মাহমুদুর রহমান মান্না
সঙ্কট উত্তরণে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক -রুহিন হোসেন প্রিন্স
একটি সফল গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণে মানুষের মধ্যে পাহাড়সম প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়। এই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কার, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনার অলিগার্কদের বিচার করা এবং দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, তিনি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান। নির্বাচনের সময়সীমা হিসেবে চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য যেন পশ্চিমা অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, গত ২১ মে অস্ট্রেলিয়ার ৪১ জন আইন প্রণেতা দ্রæত নির্বাচনের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২১ মে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি মানবিক করিডোর ও সমুদ্রবন্দর ইস্যুগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নির্বাচিত সরকারের করা উচিত মন্তব্য করেন। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পরও প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরে নির্বাচন করার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করলে উপদেষ্টা পরিষদের একজন নারী সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিরোধিতা করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ৯ মাসে বিনিয়োগে স্থবিরতা, শেয়ার বাজারের নাজুক অবস্থা, নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থানের সঙ্কটসহ নানামুখী সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে প্রতিদিনই নানা দাবি-দাওয়া ও ইস্যু নিয়ে চাপ বাড়ছে সরকারের উপর। এর বাইরে সংস্কার ইস্যুতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। অন্যদিকে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষত প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনকেই সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই কথা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো ও ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, যেসব সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো নির্বাচিত সরকারের পক্ষে দ্রæত সমাধান দেয়া সম্ভব। এ জন্য দ্রæত জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিলে এ সঙ্কট থাকবে না। রোডম্যাপ দিলে স্বাভাবিক হবে দেশের পরিস্থিতি। কিন্তু নির্বাচন যত দেরি হবে দেশ ও গণতন্ত্র তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রæত নির্বাচনের পথে হাঁটা উচিত বলে মনে করেন তারা। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলেও সুস্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিদ্যমান সঙ্কট রাজনৈতিক সরকার ছাড়া সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না, বিনিয়োগ আসবে না। কারণ সবাই মনে করে এই সরকার আজকে আছে-কালকে নেই। তাই সরকারের উচিত সুস্পষ্ট করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

দিলারা চৌধুরী বলেন, গণঅভ্যুত্থাণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল সংস্কার করা এবং বিগত রেজিমের যারা অপরাধী তাদের বিচার করে রাজনৈতিক সরকারের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটি করা না হলে সেই আগের অবস্থাতেই দেশ ফিরে যাবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত ৯ মাসে কী সংস্কার করেছে, কি বিচার করেছে কেউ জানে না। সবকিছু অস্পষ্ট। আবার নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণা করছে না। সেটিও অস্পষ্ট। আসলে সব কিছুই হতাশাজনক। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাহেব যে উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিয়েছেন তারা কোনো কাজের না। তিনি উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনও করছেন না। এসব উপদেষ্টাদের বেশির ভাগই রাষ্ট্র বোঝেন না, রাষ্ট্র চালাতে জানেন না। এনজিও চালানো আর রাষ্ট্র চালানো এক বিষয় না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যারা ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করে রেখেছেন, তাদের জন্য যে ন্যূনতম সহায়তা থাকা দরকার, সেটিও আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটিগুলোর ঘাটতি রয়েছে। উদ্যোক্তারা সময়মতো প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাচ্ছেন না, রফতানি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানিতেও দেখা দিচ্ছে জটিলতা। ‘টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানিব্যয় বেড়েছে। তার ওপর এলসি খোলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যা কার্যত আমদানি কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।

সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হিসেবে তিনি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে চিহ্নিত করেন। তার ভাষায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যত দ্রæত সম্ভব একটি জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনেই পরিবর্তন সম্ভব, অন্য কোনো পথ নেই।

অর্থনৈতিক সঙ্কট, মানবিক করিডোর-চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিতর্ক, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দাবি-দাওয়া নিয়ে নিত্যদিনই রাজধানীতে সড়ক অবরোধসহ নানা ইস্যুতে দেশ এখন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আবার দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাসেও সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছেন না সচেতন নাগরিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। আগে স্থানীয় নাকি জাতীয় নির্বাচন, তারও সুরাহা হয়নি। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও ঐকমত্য সূচিত হয়নি। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি। নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা না আসায় সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

এরই মধ্যে বিএনপি জানিয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথা শিগগিরই সম্ভব জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই জনআকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এমন প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ মনে করছেন, চলমান সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারে একমাত্র নির্বাচিত সরকার। তাদের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমেই চলমান সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। তারা তাই দ্রæতই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ পাওয়া গেলে চলমান অস্থিরতা অনেকটাই কেটে যাবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী কর্মকাÐে নিয়োজিত হলে এমন এক আবহ তৈরি হবে, যাতে মিলবে স্বস্তি। তাদের আরো অভিমত, নির্বাচন বিলম্বিত হলে সঙ্কট তো কাটবেই না; বরং তা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের ওপর মানুষের যেটুকু এক্সপেকটেশন সেটি একটু ভিন্ন। ডেমোক্রেটিভ অর্ডারে ফিরে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার সেটিই হচ্ছে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আমরা সেখানে কতটুকু এগোচ্ছি? আনসারটেনিটির মাধ্যমে যেখানে স্থিতিশীলতা থাকবে না, সেখানে মানুষ ইনভেস্টমেন্টেও ভরসা পাবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, এ সরকার কতদিন থাকবে, নির্বাচন কবে হবে, আগামী নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাবে, এ বিষয়গুলো সবার মনে কাজ করছে। কিন্তু আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া তো সেভাবে ইনভেস্টমেন্ট আসবে না।

নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন যেতে হবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত যেতে হবে কেন? আমি তো দেখছি ডিসেম্বর পর্যন্ত যাওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের জন্য তিন মাস সময় নিয়ে যাওয়া দরকার। আগস্ট, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে নির্বাচন হতে পারে। ডিসেম্বরে কেন যেতে হবে? যত বিলম্বিত হচ্ছে, দেশের মানুষের শঙ্কা বাড়ছে এবং মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তারা নির্বাচনের দিকে না গিয়ে তারা অন্যদিকে ধাবিত হচ্ছে। ‘যেসব সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তারা বলতে পারে। এক দিনের মধ্যেও বলতে পারে। এতদিন তো লাগে না। ঐকমত্য কোথায় হয়েছে, যেকোনো কাউকে বললে এটা দুই-চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সব রেডি হয়ে যায়। ঐকমত্য যেখানে হয়েছে, এসব আপনি বলে দেন। তার ভিত্তিতে আপনি ইমিডিয়েটলি রোডম্যাপ ডিক্লেয়ার করেন।

আমীর খসরু বলেন, কারো ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কার দেখতে চাই না। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে সংস্কার হবে...বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে চায়। তার নির্বাচিত সরকার চায়। নির্বাচনী কার্যক্রমের দিকে কেন এগোনো যাচ্ছে না? নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়া হচ্ছে না কেন? তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়িত্ব যেগুলো, সেগুলো এড়িয়ে অন্য কাজ কেন? এমন ভাব করছে যে, তারা নির্বাচিত সরকার, তারা দীর্ঘমেয়াদে দেশ পরিচালনা করবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে ৯ মাসে একটি সংস্কারও করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হলো নির্বাচনের, সংস্কারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু একটি সংস্কারও এই সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৬টিতে সবগুলো দল একমত হয়েছে। বেশির ভাগই তো ঐক্য হয়েছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন না কেন?

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারকে আমরা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দল এবং জনগণের নানা অংশের সহযোগিতার পরেও পরিস্থিতি কোনোভাবেই সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে, দেশব্যাপী এক ধরনের আধা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। প্রচÐ একটি অস্থিরতা চলছে। দেশে কোনো সরকার আছে তা জনজীবনে অনুভব করা যাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য রোজার সময় কিছু সহনীয় থাকলেও এরপরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। নানা আন্দোলনের কারণে ঢাকা শহর এক ধরনের স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে খুনের ঘটনা ঘটছে। একটি অনিশ্চিত জায়গায় যাত্রা করেছি। অথচ একটি অনির্বাচিত সরকার তিনটি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলের বেশি সময় তারা পার করে ফেলেছে। এই ৯ মাসে সরকারের কোনো কোনো ব্যাপারে হয়তো সদিচ্ছা আছে, তা তো যথেষ্ট নয়। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্র প্রশাসনে যে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও শক্তি থাকা দরকার, তা এ সরকারের নেই। যে কারণে তারা দেশ পরিচালনায় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছেন। আগামী দিনগুলোতে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, এ থেকে উত্তরণের পথ হলো জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের ব্যাপারে খুব দ্রæত একটি জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করে দ্রæত নির্বাচনের পথে হাঁটা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এই সরকার করিডোর, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর দেয়াসহ বেশ কিছু ইস্যুতে তাদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে যখন বাড়তি কাজ করতে চাচ্ছে, তখন সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সঙ্কট উত্তরণের একটিই পথ অন্তর্বর্তী সরকার তার এখতিয়ার ঠিক রেখে দ্রæত সময়ে নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করবে, তা করে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক। এছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বিচার প্রক্রিয়ায় গতি নিয়ে আসা এবং সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা হলো অভ্যুত্থানকারী সব রাজনৈতিক শক্তির অনুমোদন ও সমর্থন।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু করা এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, সরকার শপথ নেয়ার পরপরই দুর্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি-লুটপাটে জড়িতদের বিচার, গণহত্যার বিচার, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার এবং নির্বাচন আয়োজনÑ এই চারটি বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে পারত। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব সৃষ্টি করছে বলেও মনে করেন নূর।