Image description

আত্মপ্রকাশের আড়াই মাস পেরোলেও শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বর্তমানে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে দলটি। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি গঠনতন্ত্র। সাড়া ফেলতে পারেনি তৃণমূলের রাজনীতিতেও। অথচ এনসিপির রাজনীতিতে তার পূর্ববর্তী নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে নেই কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা। সে কারণে দেশবাসীও নতুন দলটির ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাচ্ছে না।

দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় নাগরিক কমিটি তার পাঁচ মাসে দেশের উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ প্রতিনিধি কমিটি গঠন করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটির ১১তম ও সবশেষ সাধারণ সভা। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বলা হয়, নতুন দল গঠন-পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। তৎকালীন আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠককে দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার। বলা হয়, নতুন নেতৃত্ব-পরবর্তী সময়ে নির্বাহী কমিটি, সেল ও সম্পাদকগুলোতে কারা থাকবেন-এসব বিষয়ে তাদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আরও বলা হয়, জাতীয় নাগরিক কমিটির যেসব সদস্য এনসিপিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক, তারা নাগরিক কমিটি থেকে রাজনৈতিক দলে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আড়াই মাসেও এসব সিদ্ধান্তের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

এদিকে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে।

জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এনসিপিতে নাগরিক কমিটির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হবে সেটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে এখন কোনো আলোচনা নেই। তবে নাগরিক কমিটিকে একটি সিভিক পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম বা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে রেখে দেওয়া হবে- প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছিল। নাগরিক কমিটির যারা এনসিপিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক তারা কোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন সেটি শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।

তৃণমূলে এনসিপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত বলেন, তৃণমূলে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলমের নেতৃত্বে দেশের দক্ষিণাঞ্চল আর উত্তরাঞ্চলের বিভাগগুলোতে জেলা কমিটি গঠন করতে দুটি পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব তুলে ধরবে।

দক্ষিণাঞ্চলের আওতায় রয়েছে-পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, খুলনা, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ (মহানগর ও জেলা)। উত্তরাঞ্চলের আওতায় রয়েছে-গাজীপুর, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ এপ্রিল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাবেদ রাসিনকে প্রধান করে গঠন করা হয় গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অনুমোদিত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পর পেরিয়ে গেছে আরও এক সপ্তাহ। জানতে চাইলে জাবেদ রাসিন বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন শুরু হওয়ায় সময়মতো গঠনতন্ত্রের কাজ শেষ করা যায়নি। গত সোমবার খসড়া গঠনতন্ত্র দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সভায় অতি দ্রুতই এটি উপস্থাপন করা হবে।