
আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, একটি পুরোনো দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। এতে দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রভাব পড়বে। সামাজিক সংকট তৈরি হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞায় রক্তও ঝড়তে পারে আবার সমঝোতাও হতে পারে। তবে আমাদের একটি অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তৈরি হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, যেসব অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার জন্য দলটি জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। নতুন প্রজন্ম তাদের পরিবর্তন, পরিমার্জন ছাড়া গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, এই নিষধাজ্ঞায় আওয়ামী লীগ জ্বালাওপোড়ায়ের রাজনীতি করলে টিকতে পারবে না। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা দলটির জন্য সক্রিয়। সরকারের মধ্যেও এদের লোক আছে। তবে এসবের ওপরে জনগণ। আবারও রাজনীতি করতে হলে আওয়ামী লীগকে নতুন করে আসতে হবে।
প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, সরকার আইন করে এই নিষেধাজ্ঞা অনেক আগেই করতে পারত। বর্তমানে যেটা হয়েছে সেটা চাপে। চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনে না। কারও চাপে নয় বরং সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা ও আইন বুঝে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল সময়ের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তারা গুলি করে পাখির মতো মানুষ মেরেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একটি সরকার ও তার অনুগত দল যখন জনগণের ওপর অস্ত্র ধরে তখন বুঝতে হবে তারা কতটা জালিম হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও তার সরকারের পতনের মতো দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা অনিবার্য ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি রূপরেখা ছিল। ঘোষিত সেই রূপরেখা বিলোপ হলো। তিনি বলেন, সরকার যেটি করেছে তা হলো ছাত্র-জনতার দৃষ্টিভঙ্গি। ড. ইউনূস তো বলেই দিয়েছেন-তাকে ছাত্র-জনতা ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন তাদের চাপে সিদ্ধান্ত বদল করলেন। দিলারা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার দাবি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এরপর তারা গণপরিষদ গঠন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের দাবি তুলবে। রাজপথে নামবে। কিছু রাজনৈতিক দল সমর্থনও করবে। ফলে আসন্ন নির্বাচনটি ঝুলে গেল।
আক্ষেপ করে দিলারা চৌধুরী বলেন, যা হলো তাতে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভালো নয়। বিদেশি শক্তিরাই বা এটাকে কীভাবে দেখবে। আমি এই নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কিত। এতে রক্তপাত হতে পারে আবার সমঝোতাও হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তে বিদেশিদের হাত আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এখান থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। রাজনৈতিক রেষারেষি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে খুশি হব সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা হলে। আর সে প্রত্যাশাটাই রাখছি।
বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলে, চোরাগোপ্তা হামলা করলে কিংবা গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিলে দলটির জন্য আত্মঘাতী হবে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে কাছে টানা ছাড়া দেশে এখন কোনো রাজনীতি টিকবে না। আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। খেপিয়ে সম্ভব নয়।
তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনীতিতে একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
ড. কলিমুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের একটি ভোটব্যাংক আছে। এদের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। একটি অংশ অন্যান্য দলের সঙ্গে মিশে যাবে। আরেকটি অংশ রাজপথে থাকার চেষ্টা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। কোনোভাবেই দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।