Image description

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের জন্য অন্তবর্তীকালীন প্রশাসন চলতি সপ্তাহের মধ্যে গঠন হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে নতুন এ কাঠামো। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সাত কলেজের দায়িত্বশীলদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থাসংক্রান্ত’ শিরোনামে সমন্বিত কাঠামোর অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। এ প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন একজন প্রশাসক। তিনি হবেন সাত কলেজের যেকোনও একটির অধ্যক্ষ পদমর্যাদার।

‘সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এসব ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হয়। সেটা অনেকদিন ধরে হচ্ছে না। আশা করছি, এই সপ্তাহে হয়ে যাবে। ইউজিসি প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে না। এ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের বিষয়ে আমরা জোর চেষ্টার মধ্যে আছি।’-অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সদস্য, ইউজিসি

ইউজিসির প্রস্তাব অনুযায়ী, সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে থাকবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তিসংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব দপ্তরের সমন্বয়ে সাময়িক একটি সমন্বিত কাঠামো। এসব দপ্তরের কাজ ঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সামগ্রিকভাবে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে ইউজিসি। কিন্তু এপ্রিলের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কার্যত সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে স্থবির হয়ে আছে সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। 

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এসব ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হয়। সেটা অনেকদিন ধরে হচ্ছে না। আশা করছি, এই সপ্তাহে হয়ে যাবে। ইউজিসি প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে না। এ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের বিষয়ে আমরা জোর চেষ্টায় আছি।’

সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের বিষয়ে ইউজিসির তরফ থেকে চেষ্টার কোনও ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই সপ্তাহ নাগাদ সাত কলেজের জন্য অন্তবর্তীকালীন প্রশাসক পেয়ে যাব। এরপর যত দ্রুত সম্ভব আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দেব। এটাই আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। অলরেডি শিক্ষার্থীদের একটা অংশ সাত কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। এখন পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে যত অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব, আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে চাই।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসক কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। এ কাজটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ইউজিসি এ দায়িত্বের মধ্যে নেই।’

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা অবস্থায় সাত করেজের ভর্তির আবেদন গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে জানুয়ারির শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে অধিভুক্তি বাতিল ও ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর আগেই সাত কলেজে ভর্তির জন্য ৩৩ হাজার ১০১ জন শিক্ষার্থী  আবেদন করেন। মূলত এ শিক্ষাবর্ষে থেকে সাত কলেজকে নিয়ে নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক কার্যক্রম শুরু হবে। এজন্য স্নাতকে ভর্তির আবেদন বিগত সব বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। তাই দ্রুত ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

অন্তর্বর্তী প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার কত দিনের মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন বলেন, ‘এখন আমরা এ বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাই না, কারণ কোনও মূল্যায়নে এ পর্যন্ত ইউজিসি যায়নি। মন্ত্রণালয় প্রশাসক দিলে তিনি বসে নিজেই বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবেন। এরপরের কাজ হলো, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষাটা সম্পন্ন করা। তবে আমাদের কাজটি হবে, দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা।’

গত ২৪ এপ্রিল চলতি বছরের পঞ্চম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশের সব জটিলতার অবসান ঘটেছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কমিটির কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও যথাসময়ে রূপরেখা প্রকাশ করেনি ইউজিসি। 

এদিকে গত ২৪ এপ্রিল চলতি বছরের পঞ্চম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশের সব জটিলতার অবসান ঘটেছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের রূপরেখা প্রকাশের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়নের কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু যেহেতু আমরা এখনও প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারিনি, ডে জন্য আমরা এটি এখন আলোচনায় আনতে পারছি না। প্রশাসক নিয়োগের দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা দিয়ে দেব। এ কাজটি আমরা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। বর্তমানে আমরা প্রশাসকের জন্য অপেক্ষা করছি।’

ঢাকার সাত কলেজের আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ও চলমান শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে হতে পারে, সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সাতটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বলছে , শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে জটিলতা দূর করতে পূর্বের পদ্ধতিতে চলমান শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

এ বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুন নাহার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাত কলেজের চলমান পরীক্ষাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে বলে মনে হয়। আসলে পুরো প্রক্রিয়াটা আমাদের কাছে ক্লিয়ার না। আমাদেরকে এখনও কিছু বলা হয়নি। সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আমরা পেপারে দেখেছি যে, শিগগিরই হবে। ভর্তিবিষয়ক আলাদা কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। ভর্তি পরীক্ষা কবে নাগাদ শুরু করা যায় বা অন্য কিছুর বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও মতামত চাওয়া হয়নি।’ 

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষের দিকে অন্তর্বর্তী সরকার সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ঘোষণা দেয়।