Image description

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (৯ মে) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে গণজমায়েত করার ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

মৌলভীবাজার

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ করেছে এনসিপি ও ছাত্র-জনতা। শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টা থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও সর্বদলীয় ছাত্র-জনতার ব্যানারে শহরের প্রেস ক্লাব পয়েন্টে জাতীয় পতাকা নিয়ে অবস্থান নেন তারা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবি জানান।

মৌলভীবাজার শহর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি কাজী দাইয়ান আহমদ বলেন, আমাদের গণঅভ্যুত্থানের দীর্ঘ ৮ মাস পার হলেও দেখি আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো কাজই হয়নি। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে খুনিরা বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের ভাইয়েরা বসে বসে নাটক সাজাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, জুলাই-আগস্টে যে অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতা করেছিল, এখনো সেই ছাত্র-জনতা ঘরে ফিরে যায়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য, শহীদদের হত্যার বিচারের জন্য, বিগত গুম, হত্যা, আয়নাঘরের বিচারের জন্য প্রয়োজনে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজপথে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য শাহীন ইকবাল বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশের মাটিতে কোনোভাবেই রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে, বিচারের আওতায় আনতে হবে। আসুন, আমরা সবাই জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানপন্থি সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। জুলাই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

মাগুরা

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে মাগুরায় ‘সর্বস্তরের জনগণ’ এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে ভায়না মোড় এসে অবস্থান নেন।

মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এ সময় তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের দোসররা আজও এ দেশে রয়ে গেছে। তাদের এ দেশ থেকে অবিলম্বে বিতাড়িত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ সরাসরি গুলি চালিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা শেখ হাসিনার বিচার অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে জোর দাবি জানান আয়োজকরা।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আমিনুদ্দিন আশিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাকিবুল ইসলাম , ইঞ্জিনিয়ার সেলিম হোসেনসহ অন্যরা।

সীতাকুণ্ড

আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসির) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে আইআইইউসির ক্যাম্পাসের সামনে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ২০ মিনিট পরে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

এর আগে সকাল ৯টা থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রেলপথ ও মহাসড়কে বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। রেলপথ ও মহাসড়কে প্রায় ৫০ মিনিট অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা।

তীব্র গরমের মধ্যে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সকাল সাড়ে দশটার দিকে রেলপথ ও মহাসড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের তিনটি দাবি হলো- আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে ও জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো. রাফি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিন দফা দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীরা যে সময় রেলপথ অবরোধ করেছিল ওই সময় কোনো ট্রেন না আসায় সমস্যা হয়নি।

রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. লোকমান হক বলেন, সকাল থেকে ট্রেন চলাচলে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। স্বাভাবিক নিয়মে ট্রেন চলাচল করছে।

টাঙ্গাইল

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। একই দাবিতে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন।

শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক মাসুদুর রহমান রাসেল, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান শাওন, আহমেদ শেরশাহ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক আল আমিন প্রমুখ।

এর আগে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মাভাবিপ্রবির হল চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে একাডেমিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

আন্দোলনকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। এখনো দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি কেন, তা আমরা জানতে চাই।