
২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রমকে (কারিকুলাম) আরো যুগোপযোগী করে বড় পরিসরে পরিমার্জনের পরিকল্পনা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই লক্ষ্যে ১৫টি দেশের শিক্ষাক্রম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে চলছে নানা ধরনের মূল্যায়ন, রিভিউ ও অ্যাসেসমেন্ট। তবে এই পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
শুরুতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এর বাস্তবায়ন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিমার্জনে পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত উপেক্ষা করে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। গত তিন বছরে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়।
২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরোটাই স্থগিত করা হয়। ফলে ২০১২ সালের পুরনো শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২৩ সালে যে কারিকুলাম চালু করা হয়, তাতে পরীক্ষাব্যবস্থাই অনেকটা তুলে দেওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগই ছিল ব্যাবহারিকনির্ভর পড়াশোনা। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যদিকে ২০১২ সালের যে কারিকুলাম, সেটা অনেকটাই পুরনো। গত ১৪ বছরে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের শিক্ষাক্রমেও বড় পরিমার্জন আনতে হবে।
সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্টে নতুন শিক্ষাক্রম থেকে বের হয়ে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে এ বছর শিক্ষার্থীরা যে বই পড়ছে, তাতে বড় কোনো পরিমার্জনের সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া শেষ সময়ে বই ছাপাতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক দেরিতে বই পায়। ২০২৬ সালে যে বই শিক্ষার্থীরা পাবে, সেখানেও বেশ কিছুটা পরিবর্তন আসবে। ২০২৭ সালে যে পরিমার্জন হবে, সেখানে পদ্ধতিগত কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখেই এই পরিমার্জন করা হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২৭ সাল থেকে আমরা পরিমার্জিত কারিকুলাম চালুর পরিকল্পনা করেছি। সেই লক্ষ্যে আমরা নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ করছি। পরিমার্জিত কারিকুলামে অবশ্যই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সোসাইটির ডিমান্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা ১৫টি দেশের কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা করছি। মূলত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশি কনটেক্সটের আলোকেই এই পরিমার্জন হবে। তবে এ ধরনের পরিমার্জনে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তারা অনুমোদন দিলে আমরা পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করব।’
২০২৬ সালের বই ছাপা আগেভাগেই : এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগেছে। তাই ২০২৬ সালের বই ছাপার প্রক্রিয়া আগেভাবেই শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বই ছাপার দরপত্র আহবান শুরু হয়েছে। জুন মাসের মধ্যে সব শ্রেণির বইয়ের দরপত্র কার্যক্রম শেষ করে ছাপার কাজ শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ের বই ২৬ অক্টোবরের মধ্যে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ১০ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের প্রথম দিন বই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার যে ঐতিহ্য ছিল, তা গত কয়েক বছরে নানা কারণে ব্যাহত হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় ২০২৫ সালে বই সরবরাহে অতিরিক্ত দেরি হওয়ায় শিক্ষা বিভাগের ব্যাপক সমালোচনা হয়। পাঠ্যবই ছাপা শেষ হতে দেরি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পাঠ্যবই পরিমার্জন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, টেন্ডার জটিলতা ইত্যাদি। তবে এর পরও পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল বড় কারণ। এ ছাড়া অনেক প্রেস মালিককে সক্ষমতার অতিরিক্ত বই ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছিল। এ বছরও বই ছাপার ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপা হয়। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে বইয়ের সংখ্যা অনেকটা কমে আসবে। নতুন কারিকুলাম না থাকায় গত বছর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বই ছাপাতে হয়েছে। পুরনো কারিকুলামে নবম-দশম শ্রেণির জন্য একই বই হওয়ায় বইয়ের সংখ্যা কমবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা এ বছর কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকের বইয়ের কাজ ২৬ অক্টোবরের মধ্যে এবং মাধ্যমিকের বইয়ের কাজ ১০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, তাহলেও যেন আমরা বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিতে পারি।’