
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনতার ওপর বেপরোয়া হামলা করেছে, অনেক নিরপরাদ মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে এবং অনেকের জীবন নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছিল। যৌক্তিক এ আন্দোলন বানচাল করতে গণবিরোধী এবং হাসিনার আমলে চালানো বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য গত বছরের ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ হয় ছাত্রলীগ। কিন্তু একই দোষে দোষী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের জোর দাবি থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধকরণে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র-জনতার এ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বাধা কোথায় এবং গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর থেকেই জোর দাবি থাকা সত্ত্বেও কেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না, বর্তমানে এমন প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করাটা সরকারের সদিচ্ছার অভাব, গাফিলতি এবং চরম মাত্রার দূর্বলতার নামান্তর। কেউ কেউ বলছেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কারও কারও আওয়ামীপ্রীতি বা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও মতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও এজেন্সি থেকে চাপের ভয়ে সরকারের পিছুটানের কারণে নিষিদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থমকে আছে।
আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগটিই যথেষ্ট। সরকার চাইলে ছাত্র-জনতার চাহিদার আলোকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে বা বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে পারে। রাজনীতি বিশ্লেষকরাও বিচারের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ জানাচ্ছেন।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার করা হবে। গত ২০ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি তাদের সঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচার করা হবে।
অন্যদিকে একই দিনে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে। এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
হাসনাতের এ অভিযোগের পর থেকে জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি হলে বিভিন্ন মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আরও জোরালো হতে থাকে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারাও সরব হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে কঠোর বক্তব্য দিতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত ‘শহীদি সমাবেশ’ থেকে আওয়ামী লীগকে প্রথমে নির্বাহী আদেশে, তারপর আদালতের মাধ্যমে এবং সবশেষে রাজনৈতিক সমঝোতায় সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলে ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় সরকারকে ১০০ দিনের আল্টিমেটাম দেয় সংগঠনটি।
গত ২ মে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এ সময় সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে। লীগ নিষিদ্ধের দাবি ও জুলাইয়ের এক দফা দাবি একই। নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে।
গত ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২ দফা দাবি জানানো হয়।
সবশেষ, গত ৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে এক প্লাটফর্মের (জোট) আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ জোটে আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই রেভলুশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, রক্তিম জুলাই, সোচ্চার ঢাবি, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, একতার বাংলাদেশ, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, জুলাই বিগ্রেড, স্টুডেন্ট রাইটস ওয়াচসহ মোট ৩৫টি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যুক্ত হয়। আত্মপ্রকাশের দিন প্লাটফর্মটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখছি, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত। বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসরকারি মহলের কিছু অংশ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে, যা একদিকে শহীদ, আহত ও পঙ্গু জনগণের আত্মত্যাগের চূড়ান্ত অপমান।
একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পুনর্বাসন দেশের স্বাভাবিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার শামিল। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই, বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোটের আত্মপ্রকাশ। আত্মপ্রকাশের পরের দিন ৭ মে ‘জুলাই বিপ্লব’-এ অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে প্লাটফর্মটি। এ কর্মসূচি থেকে আগামী ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারের দুর্বলতা ও গাফিলতির কারণে এখনো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। এটা তে বিচারেরই একটা প্রক্রিয়া। প্রায় এক বছর গড়াতে চলল, কিন্তু যেভাবে চলার কথা ছিল সেভাবে এখন পর্যন্ত বিচারই শুরু করতে পারেনি। যে গতিতে তাদের কাজ এগোচ্ছে, তাতে ১০ বছরেও এ কাজ শেষ হবে না বলে মনে হচ্ছে। সরকারের মূল ফোকাস হওয়া উচিত ছিল আওয়ামী গণহত্যাকারীদের বিচার। আইন তার নিজের গতিতে চললে অবশ্যই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার তো সেই প্রক্রিয়াই হাতে নিচ্ছে না। এ ছাড়া কিছু রাজনৈতিক দলও নিজেদের মতো করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
জুলাই ঐক্য জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা ও ঢাবি শিক্ষার্থী এবি যুবাইর বলেন, সরকার রাখাইনের জন্য করিডোর দেওয়ার ব্যাপারে কারও কাছে জিজ্ঞেস করেনি, এটাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ যেটি সবার প্রাণের দাবি সেটিই সদিচ্ছার অভারের কারণে এ সরকার করতে পারেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এজেন্সির কারণেও হয়তো সরকার চায় না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক। তা ছাড়া উপদেষ্টামণ্ডলীদের মধ্যকার কেউ কেউ আছেন, যারা আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয় এবং তাদের একধরনের সুশীল বলতে পারি।
জোটটির আরেক উদ্যোক্তা মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন অ্যাম্বাসি চাচ্ছে না যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক। এ জন্য উপদেষ্টারাও হয়তো চান না যে তাদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি খারাপ হোক। অ্যাম্বাসিগুলোর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তারা কোনো রকম মুলা ঝুলিয়ে সটকে পড়তে চাচ্ছেন। তা ছাড়া, ফান্ড বন্ধ হওয়ার ভয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলেরও অনাগ্রহ রয়েছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। জুলাই ও শাপলা গণহত্যা, ৫৭ আর্মি অফিসার হত্যাসহ আমরা সব হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করব।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য আইনের যে সংশোধনী প্রয়োজন ছিল, সেটাও তারা করেনি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা থাকলে তারা অন্তত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারত। কিন্তু তারা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। এটা সরকারের একধরনের কূটকৌশল।
নাছির আরও বলেন, ছাত্রদল চায় বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারিত হোক। আইন সংশোধন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দোষী সংগঠনকে শাস্তি হিসেবে সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান রাখতে হবে। তাহলে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার ও প্রশাসনের ভেতরে এখনো এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা অতীতে এই গণহত্যাকারী দলটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এবং এখনো তাদের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন। তারা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত থেকে দলটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সম্পৃক্ত রয়েছেন। ফলে সরকার চাইলেও বাস্তবে সেই বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারছে না। তবে আমরা আশা করি, সরকার জাতীয় স্বার্থ ও জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দল, ছাত্রসমাজ ও সচেতন নাগরিকদের মতামত ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জনতার আদালতে কার্যত নিষিদ্ধ হয়েছে। যে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, যারা দেশের জনগণের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যে সংগঠনের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে প্রায় দুই হাজার নিরপরাধ নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এবং গণহত্যা চালানোর পরেও যাদের মধ্যে নূন্যতম অনুশোচনা বোধ নেই—তারা কীভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে?
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে যথেস্ট তৎপর বলে জনগণ মনে করে না। গণহত্যার ৮ মাস পার হলেও গনহত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যারা যুক্ত তাদের গ্রেফতার করতেই সরকার সমর্থ হয়নি। তাই মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, অন্তবর্তীকালীন সরকার দ্রুততম সময়ে বিচার করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, গণহত্যাকারী ও সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলো ও শহীদ পরিবার এই বিষয়ে মতামত দিলেও সরকারের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ আশা করছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নির্বাচন হলে জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগকে উচ্ছেদ করেছে, সেভাবে জনগণই নিষিদ্ধ করে দেবে। নতুবা সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকারে এখন যারা আছেন, তাদের শিক্ষার্থীরা বসিয়েছে। তাদের উচিত ছিল সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বিষয়টি ফয়সালা করা। তারা এটা না করে বিএনপির নির্বাচন চাওয়ার বিরোধিতা করেছেন এবং আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হচ্ছে না। আর দোষ চাপানো হচ্ছে বিএনপির ওপর। যারা বলছে যে বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া চাচ্ছে না, তাদেরই ভেবে দেখা উচিত যে বিএনপি যেটা চাচ্ছে, সেটা তারা চাচ্ছে না কেন? আর সরকারে আওয়ামী দোসর আছে কি না, তা আমি বলতে পারব না। তবে সরকার জনগণের দাবি এবং চাওয়া পূর্ণতা দিচ্ছে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, জামায়াতের আমির এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন, সেটাই জামায়াতের বক্তব্য। আমি আলাদা করে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আইনি কোনো জটিলতা থাকতে পারে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অনেক নজির রয়েছে যে দল বা যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জার্মানির নাৎসি পার্টি এর স্পষ্ট উদাহরণ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে বাংলাদেশ দুভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একটা হতে পারে সরকারের ক্ষমতাবলে, আরেকটা হতে পারে বিচারের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ গণহত্যা, দেশবিরোধী ও গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের নিষিদ্ধ করতে এ বিষয়গুলোই যথেষ্ট। এ অভিযোগের পেছনে তথ্য-উপাত্তের কোনো ঘাটতি নেই।
সিনিয়র এ আইনজীবী আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। ছাত্রলীগ তো একটি সহযোগী সংগঠন। মূল দায় তো আওয়ামী লীগের, কারণ আওয়ামী লীগই ছাত্রলীগকে তৈরি করেছে, সন্ত্রাসী বানিয়েছে এবং ব্যবহার করেছে। আপনি ছাত্রলীগের মতো সহযোগী সংগঠনকে বাদ দিলেন, আর আসল আসামি আওয়ামী লীগকে রেখে দিলেন, এটা অযৌক্তিক।
রাজনীতি বিশ্লেষক, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা জরুরি কিনা, তা রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল নিষিদ্ধকরণ একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। কোনো দল যখন মানবতাবিরোধী অপরাধ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে এবং তা প্রমাণিত হয়, তখনই কেবল নিষিদ্ধ করার আইনি ভিত্তি গড়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধকরণে বর্তমান সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ পেছনে কৌশলগত কারণের পাশাপাশি দলটির স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে দ্রুত নিষিদ্ধের উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্ভাবনা কাজ করছে বলেই অনুমান।