
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছ। কলেজ ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত কমিটিতে একাধিক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন আগের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই ব্যক্তি দুই দলেই একই পদে দায়িত্ব পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনীতির আদর্শিক ভিত্তি নিয়ে।
এছাড়া, কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেও স্থান পেয়েছেন এমন দুইজন, যাদের অতীতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এই বিষয়টি সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
জানা যায়, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাকিব আল-হাসান রাফি ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ঠিক একই পদে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০২৫ সালের ৬ মে ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটিতেও।
শুধু রাফিই নন, সদ্যঘোষিত কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক আসিবুল হকও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিউলের একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে দেখা গেছে। যদিও তিনি দাবি করেছেন, সেসব কর্মসূচিতে তিনি স্বেচ্ছায় যাননি, বরং ডেকে নেওয়া হয়েছিল।
কমিটি ঘোষণার পরদিন, ৭ মে বিকেলে কলেজে সংবাদ সম্মেলন করে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিবাদ স্বরূপ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাইসুল ইসলাম রুপুসহ দুইজন পদত্যাগ করেন।
মহিপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
অন্যদিকে, ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক পদে থাকা রাফি দাবি করেছেন, তিনি কখনো ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন না। পরিবার বিএনপি সমর্থক হওয়ায় তিনিও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তার ভাষ্য, পূর্বের ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক জোর করে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম চৌধুরী জানিয়েছেন, কমিটি গঠনের আগে খোঁজ নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয়ে দল নতুন করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকেই রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও আদর্শের প্রশ্ন তুলেছেন। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাফসান আহম্মেদ রাকিব নিজের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মজার ব্যাপার হলো একজন ছোট ভাই ছাত্রলীগে যে পোস্টে ছিল, ছাত্রদলেও সেই পোস্টেই আছে—শুধু নামটা বদলেছে।’
এই ঘটনার পর, কলেজের ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শের জায়গা কতটা টিকে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।