Image description
নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। এই দাবি নিয়ে মাঠে নামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। টানা ৪৯ ঘণ্টার আন্দোলন, রাস্তা ব্লকেড চলার মধ্যেই দাবি পূরণের ঘোষণা আসে। শনিবার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি অনলাইনেও কোনো প্রচার-প্রচারণা করতে পারবে না আত্মগোপনে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। দেশের পুরনো এই দলটি যাতে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য তৎপরতা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে দেশের সকল রেঞ্জের আওতাধীন থানার ওসি ও জেলার এসপিদের কাছে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার ওসি ও ডিসিদেরও একইভাবে জানানো হয়েছে যাতে আওয়ামী লীগ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি ও পুলিশের অন্যান্য অপারেশনাল ইউনিটগুলো তৎপরতা শুরু করেছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার, অনলাইন প্রচারণাসহ যেকোনো ধরনের কার্যক্রমে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত পুলিশ। 

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। শনিবার রাত ১১টায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণার পরবর্তী দিনে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অন্তত ১৯টি পোস্ট দেয়া হয়েছে দলটির তরফে। যেখানে কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিবৃতিও দেয়া হয়েছে। যেখানে তারা উল্লেখ করেছে- ‘এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত থাকবে’। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিটি পোস্ট করা হয়েছে। পোস্ট করা হয়েছে বাংলাদেশের লাল মানচিত্র। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও নিজেদের আইডি থেকে একের পর এক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে আত্মগোপনে থাকা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, দাবি ওঠার পর থেকে অনেকটা নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে। তবে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের যে সকল নেতাকর্মী হত্যা মামলার আসামি তাদের ওপর নজরদারি ছিল। দলটি যাতে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে না পারে সেদিকেও নজর ছিল। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর কোনো কার্যক্রম করতে দেয়া হয়নি। এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদেরকে কোনো অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। প্রতিটা থানার ওসিরা তাদের বিট ইনচার্জদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবেন। ম্যানুয়াল নজরদারির পাশাপাশি অনলাইন নজরদারিও করা হবে। অনলাইনে যদি দলটি কোনো কার্যক্রম করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সেসব আসামিদের আটক করতে আমাদের আগে থেকেই অভিযান চলমান রয়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই নিষিদ্ধের লিখিত ঘোষণা আসলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সরকারের পক্ষ থেকে যেই নির্দেশনা আমাদের দেয়া হবে সেভাবেই কাজ করতে প্রস্তুত পুলিশ বাহিনী। তিনি বলেন, আমাদের সাইবার টিমও রেডি আছে। তারাও তাদের কাজ করছে। আওয়ামী লীগের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি, পেজসহ প্রচারণার প্ল্যাটফরমগুলোতেও নজর রাখা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর ইনামুল হক সাগর মানবজমিনকে বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। 
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন যদি তৎপর হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। এরকম কোনো সংগঠন মিছিল, মিটিং বা অন্য কোনো কার্যক্রম চালালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর ব্যবস্থা নিয়েছি। আওয়ামী লীগের বেলায়ও তাই করবো। ডিবি সাউথের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি ঝটিকা মিছিল করে তবে আইনের ভেতরে থেকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। 

ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক গতকাল তার কার্যালয়ে বলেছেন, নিষিদ্ধঘোষিত কোনো সংগঠন যদি জনগণের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাদের দমন করার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে। আমার অধীনে এসপি-ওসিদের নির্দেশ দিচ্ছি, নিষিদ্ধঘোষিত কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড আপনার এলাকায় চলবে না।