Image description

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চারদফা দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এতে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। 

শনিবার (৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ হয়। খবর বিবিসি বাংলার।

সমাবেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে যেসব শঙ্কা উত্থাপন করেছে, সেগুলোকে ‘অতিসত্বর অ্যাড্রেস’ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারীদের রাজনৈতিক দল এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতার হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ এবং বহুল আলোচিত ‘নারী সংস্কার ইস্যুতে’ তার জোরালো ও সুস্পষ্ট বক্তব্যের মাঝে ‘নারীবিদ্বেষী অবস্থান’ নিহিত রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আব্দুল্লাহর অংশগ্রহণ থেকে এটি স্পষ্ট যে এনসিপি ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের ‘ঐক্য’ ঘোষণা করছে।

হাসনাত জানান, এনসিপির প্রতিনিধি হিসেবে হেফাজতের কর্মসূচিতে গিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা এবং হেফাজতে ইসলাম গত ১৬ বছরে যেসব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেটার শিকার, ২০১৩ সালে ৫ মে গণহত্যার তারা ভিকটিম। সেই জায়গা থেকে ওখানে যাওয়া।’

তবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, হেফাজতে ইসলামের এই সমাবেশে দল হিসেবে এনসিপিকে আহ্বান করা হয়নি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী নেতা হিসেবে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

কিন্তু হাসনাত আব্দুল্লাহ যে ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন, এটি কি এনসিপি জানতো? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাবে, এটা জানতাম। যাওয়ার বিষয়ে আমরা নেতিবাচক ছিলাম না।’

এসময় তিনি আরও জানান, ‘হেফাজত দল থেকে কাউকে পাঠাতে বলেনি। তারা স্পেসিফিক্যালি হাসনাতকেই সংহতি প্রকাশের জন্য আমন্ত্রণ করেছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করে তার যে অবস্থান ছিল, তা আমরা দেখেছি। তার বক্তব্যকে আমরা আমলে নিয়েছি এবং এখানে তার বক্তব্যকে আমাদের কাছে পুরোপুরি নেতিবাচক মনে হয়নি। নারী সংস্কার কমিশন বাতিল বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য ছিল না।’

আরিফুল ইসলাম আদীবের মতে, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ শুধু এটাই বলতে চেয়েছেন যে আমাদের দীর্ঘদিনের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ যে কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়’।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রস্তাবনা আছে। নারী বিষয়ক সবগুলোতে আমাদের আপত্তি নেই। স্পেসিফিক কয়েকটি বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। যেমন...উত্তরাধিকার আইন... সমানাধিকার... বিয়ে।’

হেফাজতের সমাবেশে এনসিপি নেতার উপস্থিতি ও বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন জানান, বিষয়টাকে ‘স্রেফ ব্যক্তিগত মতামত’ বলে মনে করছেন না।

তিনি বলেন, ‘এটিকে আমি এনসিপি'র বক্তব্য বলে মনে করছি এবং তাদের অবস্থানও তাই। হাসনাতের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কমিশন ও নারী বিষয়ে এনসিপি'র অবস্থান পরিষ্কার হচ্ছে। এনসিপি কিংস পার্টি। এখানে সরকারের দল হিসেবে এনসিপি বিভিন্ন মঞ্চে, ফোরামে তাদের অবস্থান ও বক্তব্য জানান দিচ্ছে।’

ড. জোবাইদা নাসরীনের মতে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ই এনসিপি দাঁড়িয়ে আছে এবং এনসিপি সরকারি দল হিসেবেই সমাবেশে গিয়ে ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের ঐক্য ঘোষণা করছে।

তিনি বলেন, ‘এনসিপি এখন পর্যন্ত তাদের গঠনতন্ত্র ও মূলনীতি স্পষ্ট করেনি। কিন্তু তারা তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে...কার সঙ্গে তারা জোট করবে, কার সঙ্গে রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব করবে, তা তারা স্পষ্ট করছে, তাদের মতাদর্শিক-রাজনৈতিক অবস্থান জানান দিচ্ছে।’