Image description

এক.

কাউন্টার পলিটিক্সের চেয়ে নতুন নেরেটিভ দাঁড় করানো দলের জন্য বেটার অপশন। কিছু কিছু বিষয়ে খুব সচেতন ভাবেই পার্টিকে 'ইগনোর এন্ড এভয়ড' করতে হয়, হবে। বিএনপির সেই রাজনীতি এখন চোখে পড়ে। রাজনীতিতে পলিসি নিয়ে ডিবেট হওয়াটা খুব জরুরী এবং আবশ্যক। কিন্তু সব সময় অন্যের রাজনীতির জবাব দেওয়ার চাইলে নতুন চিন্তা মাঠে ছেড়ে দেওয়াই বেস্ট পলিসি। বিএনপি এই কাজটা করছে। বিএনপিকে নিয়ে আপনি হাজারটা সমালোচনা করতে পারবেন, সেই সীমাবদ্ধতা দল গুলোর থাকে। কেউ পরিপূর্ণ নয়। কিন্তু পলিসিগত ভাবে বিএনপি তার জায়গা থেকে যে একটা চেষ্টা করে যাচ্ছে ভালো কিছু করার সেটা অস্বীকারের সুযোগ কম।

বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন। একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসাবে যা ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিএনপির একটা স্মার্ট পলিটিক্স, স্মার্ট পলিসি। এটা নিয়েও সমালোচনা হতো সেই সময়, বিএনপি তো ক্ষমতায় নেই, এই ভিশন ২০৩০ দিয়ে কী করবে? কিন্তু ঐ ভিশন ঘোষণায় যেটা হলো পার্টির পলিসি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটা আগ্রহ তৈরি হলো, বিএনপি কী করতে চায় এর একটা সুস্পষ্ট লিখিত ধারণা মানুষ জানতে পেলো। রাস্তা ঘাটে, পাবলিক প্লেসে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পার্টির পলিসি নিয়ে কথা বলা শুরু হলো। দিন শেষে পার্টিকে এই ভিশন এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এর অপজিটে অনেক কথা বলতে হলো। পার্টির নতুন রাজনীতি দাঁড়ালো। নতুন নেরেটিভ তৈরি হলো।

দুই.

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২৩ সালে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা একত্রিশ দফা ঘোষণা করলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের রাজনীতি, সরকার, রাষ্ট্র কাঠামো কেমন হবে তার একটা ঘোষণা দিলেন। মানুষ আবারও জানতে পারলো বিএনপির আপডেট পলিসি কী? তুমুল তর্ক, বির্তক, আলোচনা, সমালোচনা হলো এই একত্রিশ দফা নিয়ে। এখন তো রাজধানী থেকে গ্রামের চা স্টলে এই একত্রিশ দফাই টক অব দি কান্ট্রি।

ভিশন ২০৩০ এবং রাষ্ট্র মেরামতের রুপরেখা একত্রিশ দফার মাধ্যমে বিরোধী দল হিসাবে বিএনপি একটি দারুণ পলিটিক্স করেছে। সরকারের ছুড়ে মারা বয়ানের কাউন্টার দেওয়ার চেয়ে বিএনপি রাজনীতির নতুন নেরেটিভ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। এই রাজনীতিটাই দল হিসাবে বিএনপির খুব প্রয়োজন ছিল। নতুন পলিসি, নতুন নেরেটিভ মাঠে ছড়িয়ে দেওয়ার রাজনীতি এই সময়ে খুব প্রয়োজন ছিল। এখন কিন্তু এই প্রশ্ন তুলার সুযোগ নেই যে,বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করতে চায় কেউ জানে না! বরং বিএনপি কী করতে চায় এটা দেশবাসীকে স্পষ্ট করে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে।

তিন.

ইন্টেরিম গভমেন্ট যতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এর অধিকাংশ বিএনপি তার ভিশন ২০৩০ এবং রাষ্ট্র মেরামতের রুপরেখায় অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিল।
রাষ্ট্র মেরামতের চিন্তা ভাবনা এবং পলিসি গত জায়গা থেকে বিএনপি একটি নতুন রাজনীতি নিয়ে অনেক আগেই ভাবছিল, একটি নতুন রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল, যা এদেশের গণ মানুষের আকাংখার প্রতিচ্ছবি।

রাষ্ট্রের সংস্কার কিংবা নতুন রাজনৈতিক নেরেটিভ বিএনপি ২০৩০ সালে যা দিয়েছিল এবং রাষ্ট্র মেরামতের রুপরেখা একত্রিশ দফার যে রাজনীতি দাঁড় করিয়েছে এটাকে চ্যালেঞ্জ করা খুব সহজ হবে না। একটা এমন উদার রাজনৈতিক চিন্তা বিএনপি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে যা এদেশের সব মানুষের অধিকারকে সম্মান জানায়।

বিগত পনেরো বছরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে, অনেক নিপীড়ন, নির্যাতন,গুম, খুন, হামলা, মামলা জুলুমের শিকার হয়েছে কিন্তু বিরোধী দল হিসাবে খুব প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক নেরেটিভ দাঁড় করাতেও সক্ষম হয়েছে। ফলে এতো কঠিন সময়ের পরেও বিএনপিকে নিয়েই মানুষ স্বপ্ন দেখে, নতুন দিনের রাজনীতিতে বাংলাদেশের অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

চার.

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া বিএনপিকে এক ধরনের এভয়ড করে চলেছে। যা এদেশে ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়াতে খুবই সহযোগিতা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যা একেবারেই অকল্পনীয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপির ক্ষেত্রে এটি হয়েছে। তারেক রহমানের বক্তৃতা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছিল। সরকারের চেলা চামুণ্ডারা কে কত বড় ফ্যাসিস্ট এর একটি নগ্ন প্রতিযোগিতা হয়েছে। তারেক রহমানকে এদেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার সরকারি বেসরকারি সকল উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে অসংখ্য ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। কারাগারে আর নির্বাসনে কেটেছে বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক সোনালী অধ্যায়।কিন্তু মানুষ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন ছিলেন না কখনোই।

নতুন ন্যারেটিভ নিয়ে দেশবাসীর সামনে কঠিন সময়েও বিএনপি হাজির হয়েছে। বিএনপি পালিয়ে যায় না, বেগম জিয়া আপোষ করে দেশ ছাড়েননি। অথচ সুযোগ ছিল।

বিএনপি ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে না, নিশ্চয়ই বিএনপির সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু দলটির আজকের এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে পাওয়া যাবে দলটি বিগত পনেরো বছরের নানা সংকটেও মাটি কামড়ে পড়েছিল, সময়ে সময়ে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা নতুন ন্যারেটিভ নিয়ে জনতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল, ফ্যাসিস্টের চোখে চোখ রেখে, কোনো যদি কিন্তু বাদ দিয়ে লড়াই করে গেছে। আপোষ করেনি।

পাঁচ.

এক শ্রেণির মানুষ, যারা বিএনপির কট্টর বিরোধী, তারা প্রায়ই বলেন - বিএনপির কোনো রাজনীতি নাই, বিএনপির কোনো ন্যারেটিভ নাই, বিএনপির কোনো পলিসি নাই! কিন্তু রিয়েলিটি হচ্ছে বিএনপির রাজনীতিটা খুব স্বচ্ছ এবং পরিস্কার। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক দর্শনের উপর ভিত্তি করে উনিশ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই রাজনীতিটাই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তারেক রহমান আরেকটু যুক্ত করেছেন যার নাম - সবার আগে বাংলাদেশ।
যার একটু ব্রডার সেন্স হচ্ছে রাষ্ট্র মেরামতের রুপরেখা তথা একত্রিশ দফা। একত্রিশ দফাই হচ্ছে বিএনপির আজ এবং আগামী দিনের রাজনীতি, বিএনপি আগামী দিনে কী করতে চায় সেই প্রশ্নের জবাব।

পার্টি এখন পলিসির দিকে খুব সিরিয়াসলি জোর দিচ্ছে, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিন গুলো বিএনপিরই। দল তরুণদের চিন্তা ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারুণ্যের সমাবেশ করছে। সুতরাং বিএনপির রাজনীতিতে নতুন ন্যারেটিভ দৃশ্যমান। কাউন্টার পলিটিক্সের চেয়ে দল নতুন ন্যারেটিভকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা। এটা বলাই যায় বিএনপির পলিসি গুলো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট, বিএনপির পলিটিক্স বাংলাদেশকে ধারণ করে। আরও সহজ করে বললে বিএনপির রাজনীতি এবং পলিসির মূল দর্শন এখন- সবার আগে বাংলাদেশ।