Image description

জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে যথাযথভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সারা দেশে লাখ লাখ গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়ছেন। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক জেলায় বা সার্কেলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীরা যেমন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত মাঠের অভাব, আধুনিক ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারের স্বল্পতা, রেকর্ড রুমের অপ্রতুলতা এবং ধার করা গাড়ি দিয়ে ড্রাইভিং পরীক্ষা নেওয়ার মতো সমস্যাগুলো সেবাদান প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এ ছাড়া চাহিদাপত্র দেওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় লোকবল না পাওয়ায় সংস্থাটির পক্ষে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা এককথায় দুরূহ হয়ে পড়েছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিআরটিএর অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী অনুমোদিত জনবল ৯৩১ জন হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭২৯ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের চেয়েও ২০২ জন কম লোকবল নিয়ে চলছে সংস্থাটির কার্যক্রম। ২০১৯ সালে বিআরটিএ ২ হাজার ২৮২ জন জনবলের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও যাচাই-বাছাই শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে ৩১৫ জনের অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠায়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে সেই তালিকা ছাঁটাই করে মাত্র ৯৬টি পদ অনুমোদন দেয়।

বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএর পরিচালক (অডিট ও আইন) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নানা সমস্যা নিয়ে বিআরটিএ সেবা দিচ্ছে। লোকবল সংকটের কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। ফলে বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য শুনতে হয়। অথচ একজন কর্মকর্তা একাধিক জেলার দায়িত্ব পালন করছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করছেন।

তিনি আরও জানান, ২ হাজার ২৮২ জন লোকবলের চাহিদা দেওয়া হলেও পাওয়া গেছে মাত্র ৯৬ জন। অনুমোদিত জনবলের মধ্যেও ঘাটতি রয়েছে। এত কম জনবল নিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে একজন কর্মকর্তাকে দুই থেকে তিনটি জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যার কারণে মানুষ আশানুরূপ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিআরটিএর নিজস্ব গাড়ি না থাকায় বিআরটিসি বাসের ডিপোতে তাদের গাড়ি দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেখানে বিআরটিসি ডিপো নেই, সেখানে জেলা প্রশাসকের সহায়তায় পরীক্ষা কার্যক্রম চলে। এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে বিআরটিএ চললেও রাজস্ব আয় পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

জানা গেছে, বিআরটিএর মোট সার্কেল অফিস রয়েছে ৭০টি। ৬৪টি জেলায় ৬৪ অফিস আর মেট্টো ৬টি অফিস। এই ৭০টি সার্কেল অফিসের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ৫টির—খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম জেলা সার্কেল এবং ঢাকা মেট্রো ১ ও ২ সার্কেল। বাকি অফিসগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কয়েকটি কক্ষ এবং ভাড়া করা বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। অবকাঠামো ও জনবল আধুনিকায়নের বেশিরভাগ উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সারা দেশে বিআরটিএর নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন ও ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট তৈরির উদ্যোগও ঝুলে আছে। যানবাহন পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় মাঠের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ভালোভাবে যান পর্যবেক্ষণ না করেই ফিটনেস ও অন্যান্য সেবা দিতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক কালবেলাকে বলেন, বিআরটিএর লোকবল ও লজিস্টিক সমস্যাগুলো মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করছে এবং পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিআরটিএ আধুনিকায়নের জন্য ২০১০ সালে বিভাগীয় শহরে নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন, ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট তৈরি, প্রতিটি জেলায় নিজস্ব ভবন নির্মাণ এবং নতুন জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে এসব পরিকল্পনার মধ্যে গ্রাহকরা শুধু শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা লার্নার্স কার্ড এবং গাড়ির ফিটনেস সনদের জন্য অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে জমি অধিগ্রহণ শুরু এবং ভবন নির্মাণের প্ল্যান চূড়ান্ত হলেও এরপর তেমন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাঠপর্যায়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় লাইসেন্স পরীক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আধুনিক ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার না থাকায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফিটনেস দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত রেকর্ডরুমের অভাবে যানবাহন সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, লোকবল সংকটের কারণে কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একজন কর্মকর্তাকে দুই থেকে তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আশানুরূপ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে ফের প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিকের চাহিদাপত্র দিয়ে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।