
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবার কোরবানির পশুর ১৯টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বসবে ৯টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বসবে ১০টি পশুর হাট। এরই মধ্যে দুই সিটিতে হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৯টি হাট বাদে উত্তর সিটি এলাকায় গাবতলী পশুর হাট ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় সারুলিয়া পশুর হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা চলবে।
দুই সিটির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারা দেওয়া হবে। তবে কোনো হাটে কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া না গেলে সেটি ফের ইজারা দেওয়া হবে। দরপত্র গৃহীত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে জামানত ব্যতীত অবশিষ্ট অর্থ, ১৫% মূল্য সংযোজন কর, ১০% আয়কর, নির্ধারিত হারে পরিচ্ছন্ন ফি সিটি করপোরেশনে পরিশোধ করে কার্যাদেশ গ্রহণ করতে হবে। কার্যাদেশপ্রাপ্তরা ঈদুল আজহার দিনসহ মোট ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য হাট বসাতে পারবেন।
ঢাকা দক্ষিণে ১১টি পশুর হাটের মধ্যে আফতাবনগর হাট নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে দ্বিমত থাকায় এবং মেরাদিয়া হাট নিয়ে আইনগত জটিলতা থাকায় সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বাকি ৯টি হাটের জন্য আগ্রহী ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ এলাকার চাহিদার ভিত্তিতে শিডিউল কেনেন। গত বুধবার ওটিএম পদ্ধতিতে প্রথম পর্যায়ে হাটের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। চারটি হাটে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর পাওয়া গেছে।
হাটগুলোর মধ্যে হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গার অস্থায়ী পশুর হাটটি মেসার্স সাফি এন্টারপ্রাইজ (প্রপ্রাইটর নাফিজ কবির) সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দর প্রদান করে। উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গার হাট সিকদার কনস্ট্রাকশন ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পারে খালি জায়গার হাট মুহাম্মদ আলী মিলন ২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গার হাট টিপু সুলতান ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গার হাট জয়নাল আবেদীন ৫৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর দেন।
দনিয়া কলেজের পূর্ব পার্শ্বে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পূর্ব পশ্চিমের খালি জায়গার ইজারা মূল্য ৪ কোটি ৭২ লাখ; সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল অস্থায়ী হাটের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ; শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডের খালি জায়গা অস্থায়ী হাটের সরকারি মূল্য ৬৬ লাখ এবং কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পূর্ব পার্শ্বের খালি জায়গা অস্থায়ী হাটের মূল্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হলেও কাঙ্ক্ষিত দরদাতা পাওয়া যায়নি।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, পাঁচটি হাটে সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে। এখন মূল্যায়ন কমিটি সিদ্ধান্ত দিলে তারাই হয়তো ইজারা পাবেন। বাকি হাটগুলোর দর সরকারি মূল্যের কম এসেছে।
দশটি অস্থায়ী হাট বসাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গা ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা; উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা ৮ কোটি ৯০ লাখ; বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের খালি জায়গা ১ কোটি ৭৭ লাখ; মিরপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা ২ কোটি ২০ লাখ টাকা; ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খালি জায়গা ৬৪ লাখ টাকা; খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পশ্চিম পাড়ার খালি জায়গা ১ কোটি টাকা; ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০নং সেক্টর রানাভোলা স্লুইসগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ৮১ লাখ টাকা; মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা ৮০ লাখ টাকা এবং খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারি ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে।
উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, প্রথম পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ ১৫ মে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৬ মে দরপত্র বিক্রি শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দর দাখিল করলে দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে না।
আফতাবনগরে বিক্ষোভ: আফতাবনগরে আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসাতে না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত জায়গায় সিটি করপোরেশন ইজারা দিয়ে হাট বসাতে চায়। কোনোভাবেই আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। গতকাল শুক্রবার আফতাবনগর সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বাসিন্দারা মানববন্ধন করেন। পরে তারা একটি মিছিল বের করেন। সেটি আফতাবনগরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা কাজী আলমগীর বলেন, ‘এই জায়গার মালিক আমরা এলাকাবাসী। এখানে হাট বসলে পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত নোংরা, দুর্গন্ধে আমরা টিকতে পারি না।’
মেরাদিয়ায় হাট বসানো যাবে না: মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। এতে আসন্ন ঈদুল আজহায় মেরাদিয়ায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাবে না।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খুররাম শাহ মুরাদ বলেন, ‘ওই স্থানে হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খালি জায়গা নেই। এলাকার মানুষের বাসাবাড়ির গেটের সামনে পশুর হাট বসে যায়। ফলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়।’
গাবতলী হাট নিয়ে কী হচ্ছে: ডিএনসিসির গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটে বড় অঙ্কের সরকারি আয় হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সর্বোচ্চ দর দিয়েও কার্যাদেশ পায়নি একটি প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশন নিজেই হাসিল আদায় করছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৯ মার্চ দরপত্রের বাক্স খোলা হয়। ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল আরাত মোটর্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি। পাঁচটি দরপত্র জমা পড়েছিল।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, এখানে প্রক্রিয়াগত ভুল হয়েছে। সিপিটিইউর (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) ওয়েবসাইটে এটা প্রকাশ করা হয়নি। এ কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমার সামনে নথি আসার আগে দুটি কমিটি পার হয়ে এসেছে। একটি দরপত্র কমিটি এবং অন্যটি মূল্যায়ন কমিটি। তারা কেন বিষয়টি দেখল না? এটা কি তাদের অগোচরে ভুল হয়েছে, নাকি ইচ্ছাকৃত সেটা তদন্তের জন্য আমি একটা কমিটি করেছি। আর দুদকও তদন্ত করবে।
চৈত্র মাসের শেষে এ প্রক্রিয়াগুলো শেষ হওয়ার কথা। বৈশাখ মাসের শুরুতে নতুন করে হাট থেকে হাসিল আদায়ের প্রথা চালু রয়েছে উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, যেহেতু হাতে সময় নেই, তাই আমরা নিজেরাই হাসিল আদায় শুরু করেছি। কয়েক দিন এভাবে চলুক, দেখি কী পরিমাণ হাসিল আদায় হয়। যদি দেখি ভালো হচ্ছে, তাহলে আমরা নিজেরাই করবে। আর যদি দেখি কম হচ্ছে, তাহলে মন্ত্রণালয় থেকে মতামত নিয়ে নতুন টেন্ডার আহ্বান করবে।