
বরিশালে চেক জালিয়াতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের হাত থেকে বাঁচাতে নিজ ঘরে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহানগর ছাত্রদল নেতা লাবিবের বিরুদ্ধে। এমনকি পুলিশ আসার খবরে সেই চেয়ারম্যানকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতাও করেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে সিসি ক্যামেরার রেকর্ড হওয়া এমন একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর গোরস্থান রোড এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা লাবিব মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে পালিয়ে থাকতে আশ্রয় দিয়েছেন ছাত্রদল নেতা লাবিব। এমনকি গ্রেপ্তারের দিন ইউপি চেয়ারম্যানের হয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করার প্রস্তাবও দেন তিনি।
জানা গেছে, একটি চেক প্রতারণা মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাওলাদার। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি তার নিজ এলাকা বাকেরগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান। এরপর আশ্রয় নেন বরিশাল নগরীর গোরস্থান রোডের শ্বশুর বাড়িতে।
গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহুর্তে সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছাবার পূর্বে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে নিজ হাতে চাবি দিয়ে বাড়ির ক্লবসিবল গেটের তালা খুলে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি লাবিব। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ছাত্রদল নেতা নিজেই আবার গেটে তালা দিয়ে দেন।
এদিকে, হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল। তখন অপর এক যুবক তাকে বাধা দেয়। তখন লাবিব তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ওই যুবকের সঙ্গে টানাহেচরা করেন। এমনকি যুবকের কাছে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাগটিও নিজের হাতে নিয়ে নেয় ছাত্রদল নেতা। ঠিক সেই মুহুর্তে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বরিশাল কোতোয়ালি মডেল এবং বাকেরগঞ্জ থানা পুশিল। তারা গ্রেপ্তার করেন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শহিদুল ইসলামকে।
এদিকে, তাকে গ্রেপ্তারের পর লাবিব তাকে আশ্রয় দেয়ার দায় এড়াতে ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ উদ্ধারে সহায়তা করেন বলে বলতে শোনা যায় ভিডিওতে। তখন একজন পুলিশ সদস্য তাকে আশ্বস্ত করেন। একপর্যায় ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান ছাত্রদল নেতা লাবিব। তার আগে ইউপি চেয়ারম্যানের হয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজের চেষ্টাও করেন এই ছাত্রদল নেতা।
ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেন, সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা দীর্ঘদিন ধরেই ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বিষয়টি ছাত্রদল নেতা লাবিব জানতো। ওই ছাত্রদল নেতাই তাকে বাড়িতে পালিয়ে থাকতে সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন এই ছাত্রদল নেতা।
তবে অর্থ লেনদেন এবং আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি লাবিব বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার রাজনৈতিক কোনো মামলার আসামি নয়। সে একটি চেক প্রতারণা মামলার আসামি ছিলেন। তাকে পুলিশ যখন ধরতে আসে তখন বাকেরগঞ্জের অসংখ্য লোক ছিল। তারা ওই বাড়িটিই জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাই আমি ঘরটা রক্ষা করে ওই চেয়ারম্যানকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে সহযোগিতা করেছি। এখানে লেনদেন বা অন্য কোনো বিষয় ছিল না। তবে পালিয়ে যেতে বাধা দেওয়া অপর যুবকের সাথে হাতাহাতির বিষয়টি এড়িয়ে যান লাবিব।
এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম রনি বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওটাও পেয়েছি। অভিযুক্ত মহানগর নেতা হওয়ারের সহসভাপতি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার আমাদের নেই। বিষয়টি আমরা আমাদের টিম প্রধান এমনকি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি। এখন তারা কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সে অপেক্ষায় আছি।