Image description

ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দলের নকশা করা রিকশা অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এই রিকশার অনুমোদন দেবে। চালকদের লাইসেন্সও দেওয়া হবে। এ জন্য প্রচলিত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ সংশোধন করা হচ্ছে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।

নতুন নকশার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩০০ জন মাস্টার ট্রেইনার থাকবেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে মাস্টার ট্রেইনার করা হবে। এখানে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধিও থাকবেন।

নগর ভবনে ১৭ এপ্রিল একটি অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মোট কতসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালক রয়েছেন, আগে সেই তালিকা তৈরি করা হবে। তালিকা ধরে ধরে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে
মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, স্থানীয় সরকার সচিব।

এখন সড়কে যে রকম ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে। নতুন মডেলের রিকশা বানানোর জন্য চালকদের এক বছর সময় দেওয়া হবে। এ জন্য তাঁদের বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) ঋণ দেবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও লাইসেন্সের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এরপর একটি প্রবিধান করা হবে। যেখানে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ, রিকশার কাঠামো, আইন ও জরিমানার বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়মের মধ্যে চলুক। কাঠামোর মধ্যে আসুক।’

আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, ঢাকায় পায়ে চালিত বা প্যাডেল রিকশার নিবন্ধন ও লাইসেন্স দিয়ে থাকে দুই সিটি করপোরেশন। আর মোটর যানবাহনের নিবন্ধন দিয়ে থাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিদ্যমান আইনে মোটর ও ব্যাটারি সংযুক্ত তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই সিটি করপোরেশনের। রিকশার নিবন্ধন ও লাইসেন্স দিতেই সিটি করপোরেশন আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি এলাকায়
প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি এলাকায়ফাইল ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ওই সভায় উপস্থিত স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১৫ থেকে ২০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। তবে এ সংখ্যা আনুমানিক। প্রতি ওয়ার্ডে থাকা চার্জিং পয়েন্ট বা চার্জিং স্টেশনগুলো থেকে রিকশার প্রকৃত সংখ্যা এবং চালকদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষিত তহবিল থেকে রিকশাচালকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, এ বিষয়ে সভায় স্থানীয় সরকার সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মোট কতসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালক রয়েছেন, আগে সেই তালিকা তৈরি করা হবে। তালিকা ধরে ধরে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই রিকশাকে কীভাবে আধুনিক বাহনে রূপ দেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করবে আইসিটি বিভাগ।

বুয়েটের নকশা করা নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। এটাকে একটি কাঠামোতে আনা হবে। প্রশিক্ষণ পাবেন চালকেরা। সিটি করপোরেশনের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক রিকশার সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে
মোহাম্মদ এজাজ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কতসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালক রয়েছেন, তার একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। এটা তৈরিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, এটুআই, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিএ এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দপ্তরের প্রতিনিধিরা মিলে একটি সমন্বিত ফরম তৈরি করবেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশার বাস্তব চিত্র তুলে আনতে দুই সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগকে যৌথভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা, রিকশাচালকদের নাম, পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নম্বরের তথ্য সংগ্রহ করবে।

ঢাকায় এখন দুই ধরনের রিকশা চলে—পায়ে বা প্যাডেলচালিত ও ব্যাটারিচালিত। সাম্প্রতিককালে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব রিকশা নিবন্ধনবিহীন, চালকেরও প্রশিক্ষণ নেই। তবে গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি, নিরাপত্তাও দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহন ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজের কাজ হয়নি; বরং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন নকশার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩০০ জন মাস্টার ট্রেইনার থাকবেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে মাস্টার ট্রেইনার করা হবে। এখানে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধিও থাকবেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিরাপদ যানে রূপান্তর করা।  ই-রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ঢাকার রাস্তায় কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে প্যাডেলচালিত রিকশাচালকেরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তাঁদের অন্যতম দাবি, প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়টি জিইয়ে রেখেছিল।

এ নিয়ে আগেও পক্ষে-বিপক্ষে রিকশাচালকেরা আন্দোলন করেছেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার একপর্যায়ে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করতে চাইলেও পারেনি। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে আদালত থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও বন্ধ করা যায়নি।

এখন ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ না করে এটিকে একটি কাঠামোতে নিয়ে আসতে প্রবিধান করা হচ্ছে। এটি তৈরি করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ‘সিটি করপোরেশন তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) চলাচল প্রবিধান ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, বুয়েটের নকশা করা নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। এটাকে একটি কাঠামোতে আনা হবে। প্রশিক্ষণ পাবেন চালকেরা। সিটি করপোরেশনের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক রিকশার সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

ঢাকায় এখন দুই ধরনের রিকশা চলে—পায়ে চালিত বা প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত। সাম্প্রতিককালে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব রিকশা নিবন্ধনহীন, চালকদেরও প্রশিক্ষণ নেই। তবে গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি, নিরাপত্তাও দুর্বল।

বুয়েটের দলটির নকশা করা ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা মূলত রাস্তায় চলাচলকারী ইজিবাইকের মতো। দলের সদস্যরা জানান, রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যোগ করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা এখন দেশে প্রচলিত ১২ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেছেন।