
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের দাবি ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্প্রতি সে অনুযায়ী পথনকশা প্রকাশ করলে সরগরম হয় ক্যাম্পাস। দীর্ঘ ছয় বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের আলোচনা গড়িয়েছে রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সচেতন মহলেও। কেননা জাতীয় জীবনের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা—সব ক্ষেত্রে সগৌরব অংশীদারত্ব ও নেতৃত্ব রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের সাবেক নেতা-সংগঠকদের। তবে এবারের প্রেক্ষাপট যেন একটু ভিন্ন, প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তি পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের নিয়েই বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বারই হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। আর স্বাধীন দেশের ৫৩ বছরে মাত্র আটবার ভোট দিতে পেরেছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডাকসু মনোনীত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের সদস্য হন। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগের বিষয় তুলে ধরেন সিনেটে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তা ছিল ব্যাপক বিতর্কিত। এরপর দীর্ঘ ছয় বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নতুন নির্বাচন করতে পারেনি ঢাবি প্রশাসন। নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও থাকছে না শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব। তাই শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল ডাকসু নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা করা হয়।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। সম্প্রতি তারা একটি জরিপ করেছে। আগামী জুনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করলে সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে—এ মতামত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পথনকশা অনুযায়ী, আগামী মাসের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তাই নির্বাচনকে দুয়ারে রেখে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেধাবী ও স্বচ্ছ নেতৃত্বগুণ রয়েছে এমন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা। বিশেষ করে শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়া আদায়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অংশ নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে আগ্রহী তাদেরকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নাম আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, সহসমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও মো. জোবায়ের বিন নেছার (এবি জোবায়ের), ছাত্রদল নেতা শেখ তানভীর বারী হামিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সাদিক কায়েম, ঢাবি শাখার সভাপতি এসএম ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুল আহসান মারজান, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিনসহ ডজন খানেক ছাত্রনেতার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এদের মধ্য থেকেই দেশের প্রাচীনতম এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইয়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতীতে একটি রাজনৈতিক দলের প্যানেলের বাইরে ভোট দেয়ার সুযোগ থাকত না। কেননা শিক্ষাঙ্গনে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য থাকত। বড় ভাইয়ের নির্দেশনায় ভোট দিতে হতো। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর এক নতুন সংস্কৃতি জন্ম নিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো ব্যক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করতে পারছেন। ফলে একক কোনো প্যানেলের আধিপত্য নেই এখানে। বিভিন্ন মতাদর্শের প্রার্থীদের পক্ষে সমর্থন দেয়ার সুযোগ হয়েছে।’ এ পরিবেশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ শিক্ষার্থী।
ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উমামা ফাতেমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এ শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্র সংসদের পাঠ্যকক্ষ সম্পাদক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতিতে। ছাত্রলীগের গড়ে তোলা গণরুম-গেস্টরুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ শীর্ষক স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী অধিকার প্লাটফর্ম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্বও পালন করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
উমামা ফাতেমা ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে মুক্ত আলোচনা করতে ‘মঙ্গলবারের গপ্পোসপ্পো’ নামে একটা সাপ্তাহিক পাঠচক্রের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেয়া ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন উমামা।
আলোচনায় আছেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমও। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই তিনি ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি। অবশ্য ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছেন তানভীর। বর্তমানে তিনি কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সামলেছেন খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব। খুলনায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় কলেজে পড়া অবস্থায়ই মামলার শিকার হন তিনি। জুলাই অভ্যুত্থানেও ছিল তার সক্রিয় ভূমিকা। সম্প্রতি তিনি ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা, বিনা ডেলিভারি চার্জে হলে ওষুধ পৌঁছে দেয়া, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ওষুধ বিতরণ, নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন ও ৩৩ শতাংশ কম খরচে প্যাড সরবরাহ, ঈদের দিন হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. জোবায়ের বিন নেছারী। স্যার এএফ রহমান হলের এ আবাসিক শিক্ষার্থী ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার জোবায়ের নিরাপদ ও শিক্ষার পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিতে বেশ সক্রিয়। তবে তিনি কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হননি। এবারের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে তাকে নিয়েও বেশ আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য ছিল একচেটিয়া। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পাল্টে যায় সবকিছু। এরই মধ্যে ডাকসুর গঠনতন্ত্র, আচরণবিধি ও পরামর্শ প্রদানবিষয়ক কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেটের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কঠোর শৃঙ্খলা আনতে নতুন আচরণবিধি চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে হতে পারে প্রার্থিতা বাতিল, অর্থদণ্ড কিংবা বহিষ্কারের মতো শাস্তি। প্রচারণায়ও থাকছে কঠোর নিয়ম-কানুন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা সিন্ডিকেট সভায় আচরণবিষয়ক কমিটির দেয়া সুপারিশের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার এ বিধিমালা অনুমোদন হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি সবার আগে জরুরি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ভুতুড়ে পরিবেশ ছিল। সব ছাত্রসংগঠন সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারেনি। এবারো কি একই পরিবেশ থাকবে? আমরা সব সংগঠনের সহাবস্থান চাই। তবেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’ জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির জন্য সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন করা জরুরি বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।
ডাকসুতে ভিপি (সহসভাপতি), জিএসসহ (সাধারণ সম্পাদক) মোট পদ ২৫টি। ভিপি ও জিএস ছাড়া বাকি পদগুলো হচ্ছে সহসাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সংস্কৃতি সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক এবং ১৩টি সদস্যপদ। আর এসব পদে নির্বাচন করার জন্য অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ আবার মাঠে না নামলেও আছেন আলোচনায়।
বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এ আবাসিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিলেও ভোটে লড়তে চান স্বতন্ত্রভাবে। তিনি নিরাপদ ও দূষণমুক্ত ক্যাম্পাস, ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধান, মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবিসহ বিভিন্ন সময়ে নানা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন; দিয়েছেন নেতৃত্বও। ২০২৩ সালে তার নেতৃত্বেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হয়। গেস্টরুম-গণরুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাইবার বুলিংয়েরও শিকার হন মুসাদ্দিক। প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থাকায় জুলাই অভ্যুত্থানকে সংগঠিত করতে বেশ সুবিধাও হয় তার।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের সাদিক কায়েম ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিতে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রথম সারির সমন্বয়কদের আটক করে সরকার আন্দোলন দমাতে চাইলে তিনি দ্বিতীয় সারির সমন্বয়কদের সেফ হোমে রাখার ব্যবস্থা করেন। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এ ছাত্রনেতা। জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে সাদিক কায়েমের সহযোগী হিসেবে ঢাবি শিবিরের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাবি শিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন এবং ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে বিতাড়িত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন বাকের। জুলাই অভ্যুত্থানে সারা দেশে নেটওয়ার্ক বিল্ডিংয়ের কাজ করেছেন তিনি। ডিবি কার্যালয়ে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেও তাকে আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে বাকের কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান। এর আগে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্রলীগের দমন-পীড়েনের বিরুদ্ধে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে রাজনীতি করেছেন। সামলেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এ ছাত্রনেতা।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে এএফ রহমান হল ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচন করেন। সে বছরই তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০২১ সালে ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধীসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ায় আটবার হামলার শিকার হন ইয়ামিন। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ও চারবার জেলে যেতে হয়। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা, স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দেয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। এতে সঠিক ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। তারা অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে তাদের এ মনোভাব অবশ্যই ইতিবাচক। তবে আমাদের দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া।’