
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর আদালতের রায়ের মাধ্যমে পদে বসাকে সমর্থন করেন না স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তার মতে, এর মাধ্যমে অবৈধ ওই সব নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
শুক্রবার একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, নিজের মন্ত্রণালয়ের কাজ, বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স, সাবেক এপিএসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্থানীয় সরকারে আদালতের রায়ের মাধ্যমে পদে বসা নিয়ে।
আদালতের রায় পেয়ে মেয়র পদে প্রথম বসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। নির্বাচন হয়েছিল ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। তাতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বড় ব্যবধানে জয়ী হন।
অবশ্য ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আর কার্যালয়ে যাননি। তাকে মেয়রকে অপসারণ করে গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর করা মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলা হয়। নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করে।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মেয়র পদে বসার পর আরও কেউ কেউ উৎসাহিত হচ্ছেন।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত। ইশরাক ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলেন।
অবশ্য আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ইশরাক প্রথমে নির্বাচনি রায় বাতিলের আবেদন জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শাহাদাতকে চট্টগ্রামের মেয়র ঘোষণার পর তিনি আদালতে সংশোধনী আরজি জানান। সেখানে তাকে বিজয়ী ঘোষণার আবেদন করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ২৯ শতাংশ। যদিও সারা দিন ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকায় ভোটের এই হার নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০২৩ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে ২৩ এপ্রিল আদালতে মামলার আবেদন করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস)।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে এভাবে পদে বসে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোকে একধরনের বৈধতা দেওয়া হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আপনি কী বলবেন?
জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি, ওই নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং অ্যাকনলেজ (স্বীকৃতি দেওয়া) করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং অবৈধ নির্বাচন থেকে কোনো প্রাপ্তিস্বীকার না করার সততাটা থাকা উচিত।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তো উচ্চ আদালতে যাওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে দিচ্ছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের ঘটনার সময় এটা হয়েছে। তখন আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম না। এই যে রায়টা হলো, এ মামলায় কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনো পক্ষ ছিল না, আমরা পক্ষভুক্ত ছিলাম না। সুতরাং অফিশিয়ালি এটার অপোজ করার সুযোগ আমাদের নেই।’
‘প্রার্থী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পরে আসলে মেয়র ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টা তাদের আরজিতে যুক্ত করেছেন। আগের আরজিটা ছিল নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা বা ফলাফল অবৈধ ঘোষণা করা। কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর অনেকেই এসে ফলাফল অবৈধ ঘোষণা করে নিজেকে মেয়র ঘোষণা করার আরজিটা যুক্ত করেছেন।’ বলেন আসিফ মাহমুদ।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু পক্ষভুক্ত নই, সুতরাং অফিশিয়ালি আমাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিষয়টা যখন আমাদের কাছে আসবে...। এখনো বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের কাছে আছে। নির্বাচন কমিশন গেজেট করবে নাকি আপিল করবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে এলে আমরা এটা দেখব।’