
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কিছু মিছিল নিয়ে অনেকের বিশ্লেষণ শুনছি। আওয়ামী লীগ ”শক্তিশালী দল”, ”ফিরে আসবেই” এইসব সারবত্তাহীন আলাপ। আমার বিবেচনায় সংকটপূর্ণ আওয়ামী লীগকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ”র”। অতীতে, আওয়ামী লীগ যে স্বাধীন বাংলাদেশে খাদে পড়েও কয়েকবার যে ঘুরে দাড়াতে পারলো, আমি মনে করি এর বড় একটি কৃতিত্বই ”র”-কে দিতে হবে। কীভাবে ও কেন সেটি জানতে চলুন একটু অতীত পর্যালোচনা করি।
আওয়ামী লীগ ও ”র”-এর এই সম্পর্কের শুরু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরুরও অনেক আগে থেকে। ১৯৬০ দশকেই র আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে রসদ জোগায়। এটি ছিলো টু-প্রঙ্ড স্ট্রাটেজি (দ্বিমূখী কৌশল) - পশ্চিমে বালুচ বিচ্ছিন্নতা আন্দোলনে মদদ দেওয়া, পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তানে। পশ্চিমে তারা এযাবৎ সফল না হলেও পূর্বে ১৯৭১ সালে তারা সফল হয়। যার ফলে পাকিস্তানকে আলাদা করা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ”র”-এর সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে ভারতীয়রা উদযাপন করে। এবং ভারতীয় নথিপত্রে ১৯৭১ সালেরও বহু পূর্ব থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে ”র”-এর অপারেশনের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এর আরও সত্যতা পাবেন ১৯৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরার আগরতলায় আওয়ামী লীগ ও ভারতীয়দের “ষড়যন্ত্রমূলক” বৈঠক এবং তার ভিত্তিতে যে মামলাটি করা হয় তাতে (যা ”আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” নামে পরিচিত)। দীর্ঘদিন এটিকে “মিথ্যা মামলা” বলে আমাদেরকে ভুল ইতিহাস শেখানো হলেও স্বাধীনতার ৪০ বছর পর তোফায়েল আহমেদ ও আসম রবরা প্রকাশ্যে টিভি সাক্ষাৎকারে সেটি স্বীকার করেছেন।
কিন্তু এটা আলবৎ সত্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” কিংবা মোটাদাগে ভারত তখন অকৃত্তিম বন্ধু।আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে তখনকার তাদের সহায়তাগুলো ছিলো অক্সিজেনের মতো। মুক্তিকামী মানুষের একটি বড় অংশ সক্রিয়ভাবে ও ইতিবাচকভাবেই ভারতের সেসব সহায়তা উদারহস্তে গ্রহণ করে। আপনি পাকিস্তানী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে ভারত গাদ্দারী করছে, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ, সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তখনকার বাস্তবতায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কৌশলগত একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষার তৎকালীন স্বার্থের সাথে এই সম্পর্কে পুরোপুরি কনভারজেন্স ছিলো বিধায় বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ নিঃসন্দেহে সেটিকে মেনে নিয়েছে ও স্বাগত জানিয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)।
কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর ভারত ও বাংলাদেশ দুটি আলাদা রাষ্ট্র, আলাদা সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে একটি অনিবার্য নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়। এই বাস্তবতায় ভারত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কনভারজেন্সের (সম্পর্কের মিল) তুলনায় ডাইভারজেন্সগুলো (সম্পর্কের অমিল) বেশি দৃশ্যমান হয়ে দাড়ায়। যেমন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ভারতে নিয়ে যায় যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে (মেজর জলিলদের বিদ্রোহের অন্যতম একটি কারণ এটি), আন্তঃসীমান্ত নদীতে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার (ফারাক্কা বাঁধ ১৯৭১ সালের পর চালু হয়) ও বাংলাদেশের একটা বড় অংশে মেরুকরণে ভারতীয় অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ, এবং বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপ স্পষ্ট হতে থাকা প্রভৃতি। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে আমাদের নতুন রাষ্ট্রের সম্পর্কের এই অমিল বা বৈপরীত্য (ডাইভারজেন্স) অপ্রত্যাশিত কিংবা অননুমেয় ছিলো না। তবে এই সমস্যাগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে তার স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সাথে নেগোশিয়েট করার কথা। কিন্তু যেটি অপ্রত্যাশিত ও অননুমেয় ছিলো সেটি হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরও, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে ১৯৭৫ সালের পর, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর খপ্পরে থেকে যাওয়া বা সেখান থেকে বের হতে না পারা।
এটি সত্য বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা অবস্থায় উনি এটির হ্রাস টেনে ধরতে চেয়েছিলেন, যদিও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্যারালাল হিসেবে আওয়ামী লীগের একটা অংশকে ভারত “মুজিব বাহিনী” হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয় এবং তার স্বার্থ রক্ষার একটি বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে তৈরি করে বলে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই মুজিব বাহিনী দেশের রাষ্ট্র ও প্রশাসনে ঝেঁকে বসে, এবং তা বঙ্গবন্ধুর সম্মতিতেই। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন, কিন্তু তার দলের একটি বড় অংশ তখনও “র”-এর তৈরি ও ফরমায়েশ খাটার বাহিনী হিসেবে দেশে ক্রিয়াশীল। বিষয়টি গুরুতর আকার ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। দিশেহারা আওয়ামী লীগকে আবারও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” পুনরায় ক্রিয়াশীল করায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একাজে তারা ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে ও ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের (কাদের সিদ্দিকীসহ) একটা বড় অংশকে (ঠিক এখনকার মতোই) সংগঠিত করতে সর্বপ্রকার সহযোগিতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে সহায়তা করে। তাদের একপ্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ও সমর্থনে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হয়। তারপর থেকে ভারত, “র”, এবং আওয়ামী লীগের এই আনহোলি এলায়েন্স বা নেক্সাস বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি দুঃখজনক বাস্তবতা তৈরি করেছে।
আমি মনে করি আওয়ামী লীগ যদি ভারত প্রশ্নে ১৯৭১ সালের পর তার অবস্থান রিক্যালিব্রেট করতো, পুনর্বিবেচনা করতো, তাহলে দলটি একটি শক্তিশালী জাতীয় দল হিসেবে সবসময়ই প্রাসঙ্গিক থাকতো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগ স্বাধীন দেশেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ”র”-এর খপ্পর থেকে বেরোতে না পারার ফলে একটি ভয়ংকর প্যারাডক্স তৈরি হয়। একদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে “র” ও আওয়ামী লীগের এই সম্পর্ক আমাদেরকে স্বাধীনতার সাফল্য এনে দিয়েছে, অন্যদিকে ১৯৭১-পরবর্তী স্বাধীন দেশে এই সম্পর্ক বজায় রাখায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকট তৈরি করে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এই আনহোলি এলায়েন্স সম্পর্কে আগাগোড়াই অবগত এবং অবগত বলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের একটি ক্রমাগত ছায়াযুদ্ধ চলে আসছে। এর কারণও আমি আমার আগের এক লেখায় বলেছি যে বাংলাদেশে দেশ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী পুষলে দেশের ভাবী শত্রুপক্ষের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দহরম-মহরম একইসাথে ফাংশন করতে পারে না। এটি অক্সিমোরনিক।
সুতরাং এহেন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের একাত্তর ও একাত্তর-পূর্ববর্তী ঘটনার অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিয়েও, স্বাধীন বাংলাদেশে দলটিকে ফাংশন করতে দেওয়া উচিত না। মুক্তিযুদ্ধ পূববর্তী ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবদানের জন্য দলটিকে একটি মেডেল দিয়ে তারপর দলটিকে ভেঙে দেওয়া উচিত ও জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। তবে ভারতের ”র”-এর মতো একটি শক্তিশালী বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার মোকাবেলা করে দলটিকে পুরোপুরি অকার্যকর করার কাজটি নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন হবে। এর জন্য বাংলাদেশপন্থী সামরিক ও বেসামরিক পক্ষগুলোকে আরও বেশি সমন্বিত, সংগঠিত, শক্তিশালী, এবং কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
এটি কি রাজনৈতিক সমস্যা?
বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীরা মনে করে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিকভাবেই দলটিকে মোকাবেলা করতে হবে। বন্ধুগণ, আপনারা আংশিক সঠিক। আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা ঠিকই একটি রাজনৈতিক সমস্যা। তবে এটি একইসাথে বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদী মোকাবেলারও সমস্যা। এটি মূলত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে ডিল করা। এখন আপনারা সেটি করবেন কিনা ভেবে দেখেন।
জুলাই-২৪ রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের গর্ভে জন্ম নেওয়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশ-পন্থী রাজনীতির এক এক্সপ্রেশন/ প্রকাশ হিসেবে এসেছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবী তুলছে বাংলাদেশে নিরঙ্কুশ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা ও জুলাইয়ে সংগঠিত নির্মম হত্যাযজ্ঞের দায়ে। এগুলোর পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চাই আরও বেশি গুরুতর যে অপরাধ দলটির সাথে জড়িয়ে আছে তার জন্য - যেমনটি উপরে ব্যাখ্যা করেছি, দলটি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি স্পষ্ট হুমকি এই বিবেচনায়। দলটির পরিচালনা, সংগঠন, এবং পুনর্গঠনে গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর বিপুল প্রভাব বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে আপোষ করে। দলটি বিগত এক দশক একটি নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েমও করতে পেরেছে ভারতীয়দের এই প্রত্যক্ষ মদদে। এইসব নিয়ামক বিবেচনায় দলটিকে অন্য আর দশটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলের মতো বিবেচনা করার সুযোগ নেই। আগামী দিনগুলোতে এনসিপি দলটিকে নিষিদ্ধ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিবে। চলুন সবাই সংকীর্ণ ও স্বল্পকালীন দলীয় লাভ-ক্ষতির হিসাব ভুলে গিয়ে এই আন্দোলনে শরিক হই, সহায়তা করি। সরকারের উপর আমরা সবাই চাপ সৃষ্টি করলে সরকার এটি করতে বাধ্য হবে।
অন্য আর কোন দলের বিরুদ্ধে কি এ ধরনের অভিযোগ আছে? থাকলে করণীয় কী?
এটি সত্য যে, দেশে ক্রিয়াশীল আরও একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও অতীতে বিদেশী রাষ্ট্রের সহায়তায় দল পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকেও কি আমরা একইভাবে ডিল করবো? প্রথমত, আমি এ ধরনের যেকোনো দায়বদ্ধতার সম্পর্কের তীব্র বিরোধী এবং যেকোনো দলের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ থাকলে তাদেরকে জাতীয় রাজনীতিতে সুযোগ না দেওয়ার পক্ষপাতী। কারণ তাদের আনুগত্য তখন বাংলাদেশের জনগণের প্রতি না থেকে সহায়তাকারী বিদেশী দেশটির প্রতিই বেশি থাকার কথা। এদেরকে কতটা গুরুতরভাবে ডিল করতে হবে তার জন্য আমার ব্যক্তিগত মানদণ্ড হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা। এই ধরনের সম্পর্ক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে আপোষ করছে কিনা এবং সেটি কীভাবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের পলিসি অটোনমিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এগুলো গুরুতর হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাসত্তর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী।
ব্যান করার পর দলটির অসংখ্য নেতাকর্মীদের কী করবেন?
একটি যৌক্তিক প্রশ্ন রয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে ব্যান করলে এই দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থকদের কী হবে! এটি সত্য দলটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে। জার্মানিতে নাৎসি পার্টি ব্যান করার সময়ও বিপুল সংখ্যক লোক দলটিকে সমর্থন করতো। কিন্তু সেটি দলটির ব্যান করায় বাধা হয়ে দাড়ায়নি। এই বাস্তবতায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ও প্রস্তাব করি, যেসব আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ নেই, তাদেরকে আপনারা সকল দল উদারভাবে নিজ-নিজ দলে টেনে নেন। এসব নেতাকর্মীকে টেনে নেওয়ার প্রশ্নে কেউ কাউকে ”আওয়ামী পুনর্বাসন করছে” এই অভিযোগ বা ট্যাগ দিয়েন না। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আপনাদের ডাকে সাড়া দিবে। দলটির বুর্জোয়া চরিত্রের কারণেই তারা এটি করবে। আমার বাবার মতো দলটির ১-২ শতাংশ লোক মুক্তিযুদ্ধের তীব্র আবেগের ফলে দলটি নিয়ে যৌক্তিকভাবে বা দেশের সামগ্রিক স্বার্থে চিন্তা করে না। এই অংশটা আসবে না। এদেরকে একটা রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ায় হিলিং-এর মধ্যে যেতে হবে। কিন্তু গত কয়েক দশকে যারা দলটির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে তারা ব্যক্তিগত লাভালাভকে গুরুত্ব দিয়েছে। আপনারা বর্তমানে তাদের নিরাপত্তা বিধান ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আপনাদের দলে নিয়ে নেন।
বন্ধুগণ, এটি রাজনৈতিক আপোষকামিতার প্রশ্ন নয়। এটিকে দেশ বাঁচানোর কৌশল হিসেবে নেন। এটিই বাংলাদেশকে ভারতীয় আধিপত্যবাদী আগ্রাসন থেকে বাঁচানোর অন্যতম তরিকা। আপনাদের কাছে আরও ভালো কোন তরিকা থাকলে বলেন। না থাকলে, ”র”-এর পুতুল হিসেবে দেশের একটি রাজনৈতিক অংশকে ব্যবহৃত হওয়া থেকে রক্ষা করার কৌশলের অংশ হিসেবে এদেরকে আপনাদের দলে টেনে নেন। আমি বলছি না কেবল এনসিপি বা বিএনপি কিংবা জামাত এই কাজ করুক। বরং বর্তমানে ক্রিয়াশীল সকল দল মিলে এই কাজ করুন। সব ক্রিয়াশীল দল আওয়ামী লীগের এসব লোককে নিজ-নিজ দলে টেনে নেন। বাংলাদেশকে বাঁচান। ‘র”-এর চক্রান্ত রুখে দিন।