Image description

নির্বাচনের ইস্যুতে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। ঠিক করা হচ্ছে দলের কর্মপরিকল্পনা। কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে সে বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করছেন নেতারা। চলছে বিশ্লেষণ। শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। নির্বাচন ছাড়াও জনসম্পৃক্তমূলক ইস্যুসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে। এপ্রিল মাসে মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে যাওয়ার আলোচনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জনমত তৈরির সঙ্গে সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতিও সেরে রাখতে চাচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজাবে দলটি।

ওদিকে সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ধোঁয়াশা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি’র মধ্যে এই সংশয় বেশি। দলটি বারবার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদ দিচ্ছে। নির্বাচনের সুস্পষ্ট সময়সীমা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। তাদের তাগিদেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সময়সীমা ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার সংক্ষিপ্ত চাইলে তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। সংস্কার বৃহৎ চাইলে আগামী বছরের জুনে হবে। সরকারের এই বক্তব্য অস্পষ্টতার অভিযোগ তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বলছে, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত বলে মনে করে দলটি। 

এ বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য আহ্বান জানাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কী করবে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। তার ফলশ্রুতিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো আমরা কোন পথে এগোবো। 

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার জনগণের কাছে স্পষ্ট নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করবে। কিন্তু আমরা কখনো শুনছি ডিসেম্বর, কখনো শুনছি মার্চ, কখনো আবার জুন- এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে সরকার। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা উচিত।

ওদিকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে সভা ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ১১ই ফেব্রুয়ারি থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি করে দলটি। সার্বিক বিষয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে বিএনপি’র কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান অস্পষ্ট। তারা বিশেষ একটি মহলের পারপাস সার্ভ কর?ছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়। এজন্য কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হচ্ছে। কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করছে। পাশাপাশি সরকারের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি বারবার বলছে, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম দিতে না চাইলে দ্রুত নির্বাচনের দিতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলছে। বিএনপি তো সংস্কারের রূপরেখা আগেই দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিএনপি’র সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচিত সরকারকে এই দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যদি বিলম্ব করে তাহলে আমাদের আগের কর্মসূচিতে যেতে হবে।

এদিকে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংস্কার শেষে নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি’র নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। ওদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় জামায়াত এবং গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলছে এনসিপি। এটাকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ্‌ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ড আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্য দেশে সংকট সৃষ্টি করবে এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে। আমরা বারবার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তীকালীন দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।