Image description

ঝালকাঠি শহরের ‘মিতু’ সিনেমা হল। শহরের প্রাণকেন্দ্র কালিবাড়ি রোডের আমতলা মোড়ের উত্তরপূর্ব পাশে হলটির অবস্থান। এক সময়ে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়, দীর্ঘ লাইন ও কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ করাই ছিল এই সিনেমা হলের স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেই সিনেমা হলটি এখন আদর্শ একটি মসজিদ। যেখানে সিনেমার পর্দায় প্রচারিত হতো পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি, সেখানে এখন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

এই মসজিদে দিনে পাঁচবার মুয়া্জ্জিনের ডাকে আকাশে ভেসে উঠে পবিত্র আজানের সুমধুর ধ্বনি। মুসল্লিদের পদভারে মুখর থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণ। প্রতি বছর রমজানে পড়া হচ্ছে খতমে তারাবির নামাজ। স্থানীয়রা মসজিদটির নাম দিয়েছেন, ‘খানকায়ে মুছলিহীন ঝালকাঠি’। তবে অনেকে চেনেন ‘কায়েদ মহল’ নামে। মুসল্লিরাও এখানে মসজিদ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের অন্য দুটি সিনেমা হল বন্ধ হলেও এটি চলছিল। আর্থিক সঙ্কট ঠেকাতে বন্ধ হওয়ার আগ মুহুর্তের শেষের দিকে কুরুচিপূর্ণ ছবিই বেশি দেখানো হতো। এসব পোস্টারে ছেয়ে যেত শহরের দেয়াল। এসব দেখে হতাশা প্রকাশ করছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আযিযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ সাহেব) হুজুর।

 

মাওলানা আযিযুর রহমান নেছারাবাদী একদিন বলেছিলেন, ‘এই সিনেমা হলের জায়গাটা এক সময়ে নামাজের স্থান হবে। এখান থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মানুষকে নামাজে ডাকা হবে।’ দেড় যুগ পরে সেই কথা বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন। এমতবস্থায় কায়েদ সাহেব হুজুরের ভবিষ্যত বানী বাস্তবায়ন হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে সব মহলে।

 

স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনের সময় মিতু সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যায়। এই সিনেমা হলটির মালিক সৈয়দ জিয়াউল হক আবু জাহিদ ওই সময় হলটি বিক্রি করে দেন। পরে ক্রেতা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন ওই ভবনটিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেন।

পরে কায়েদ সাহেব হুজুরের একমাত্র সাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী মাহবুব হোসেনের কাছ থেকে ভবনসহ জমিটি কেনেন। স্থাপনার অবকাঠামো পরিবর্তন করে সেখানে একটি খানকাহ স্থাপন করেন তিনি। যার নাম দেয়া হয় ‘কায়েদ মহল’। বর্তমানে এখানে জামায়াতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, জিকির-আজকারের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক তালিমি জলসা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

নেছারাবাদের কার্যক্রম সম্পর্কে কয়েকজন প্রবীন জানান, কায়েদ সাহেব হুজুর ছিলেন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি। তিনি মাঝেমধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত কারামতি দেখাতেন। একদিন ঝালকাঠি শহরে প্রবেশ করছিলেন। তখন মিতু সিনেমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অশ্লীল পোস্টার দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন আধ্যাত্মিক অবস্থায় বলছিলেন ‘একসময়ে এখানে নামাজ হবে’। দীর্ঘ বছর পরে হলেও আল্লাহর ওলির সেই কথাটি আল্লাহ কবুল করেছেন।