Image description

সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কীভাবে দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে অন্তহীন গুজব সিলেট জুড়েই। যদিও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজেই এক ভিডিও বার্তায় কীভাবে লন্ডন পৌঁছেছেন তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। এরপরও সিলেটের রাজনীতিতে এ নিয়ে মুখরোচক নানা কথা চাউর হয়ে আছে। বলা হচ্ছে- সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে পালাতে সহায়তা করেছেন। এ নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিল মানবজমিন। তিনি বলেছেন, এসব কথা সত্য নয়, স্রেফ প্রপাগান্ডা।  

এর আগে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, ৫ই আগস্ট সরকার পতনের দিনেই তিনি সিলেট সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ১৪ই আগস্ট বের হন। ১৭ই আগস্ট লন্ডনে পৌঁছান। 

আনোয়ারুজ্জামান নিজেই বিষয়টি পরিষ্কার করলেও তার দেশত্যাগ নিয়ে নিঃশব্দ উত্তেজনা আছে সিলেটে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তার পালানোর সঙ্গে নেতাদের নাম ছড়িয়ে মুখরোচক আলোচনাও ছড়ানো হয় রাজনীতির মাঠে। এই আলোচনার মধ্যে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নামও আসে। 

এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বাস্তবতা হলো আনোয়ারুজ্জামান নিজেই ফেসবুকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত পোস্ট করেছেন। তিনি কীভাবে দেশ ছেড়েছেন? তা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিজের মুখে  বলেছেন কীভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় চট্টগ্রামে গেছেন। সেখান থেকে কীভাবে নির্বিঘ্নে ফ্লাইটে উঠলেন। সবই বলেছেন। 
শুধু তাই নয়, এজন্য তিনি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট অফিসারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাকে সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার নিজের বয়ানেই সব অস্পষ্টতা দূর হয়ে গেছে। তারপরও তারা আমাকে দোষারোপ করে। আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যারা মেয়র বানানোর জন্য আনোয়ারুজ্জামানকে লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছে, তার পক্ষে সভা করেছেন। তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন। জয়ের জন্য ক্যাম্পেইন করেছেন তারা আজ বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে। তারা আমাদের দল করে না, ভিন্ন দলের। কিন্তু তারা যখন লন্ডন থেকে আসেন তখন আমাদের নেতাদের বাসায় উঠেন। সেই কর্নার থেকেই আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। আমাকে কীভাবে  ধ্বংস করতে চায়। এ জন্যই এসব প্রচার প্রপাগান্ডা। যারা আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র বানানোর জন্য দিনরাত খাটলো, সভা-সমাবেশ সফল করতে পরিশ্রম করলো তারাই এখন প্রপাগান্ডা করে আমি নাকি তাকে সীমান্ত পার করে দিয়েছি! 

৫ই আগস্টের পর থেকে পলাতক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের সহায়-সম্পত্তি এবং ব্যবসা বিএনপি নেতাদের দখলে যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যথাযথভাবে বিষয়গুলো খোঁজ নেইনি এখনো। তবে এমনটা সত্য হলে তা খুবই দুঃখজনক। কারণ আমাদের বুঝতে হবে তারা জাতির ওপর কতোটা নির্যাতন নিষ্পেষণ চালিয়েছে। তাদের অত্যাচারের শিকার আমরাও। আরিফুল হক চৌধুরী স্বীকার করেন যে, সিলেটে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা তাদের বিশাল সম্পত্তি রক্ষার জন্য বিএনপি নেতাদের কাছে তাদের ব্যবসা ট্রান্সফার করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু ঘটনার জ্বলন্ত প্রমাণ আছে। একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে আছে।

সিলেটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিএনপি’র দায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৭ বছর পর নতুন এক পরিস্থিতি। ৫ই আগস্টের পর পুলিশের মনোবল খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা অগোছালো ছিল এবং দায়িত্ব পালন করছিল ঢিমেতালে। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে কিছু দুষ্কৃতকারী। এ সময় (রাতারাতি) কিছু হাত পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্য।  আগে যারা খেয়েছে তারা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য গ্রুপ সেটা দখলে নিয়েছে। এদেরকে তো রাজনীতিবিদ বলা যায় না।  এরা কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির নাম ব্যবহার করে কাজটি করেছে। 

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা স্মরণ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এসব বন্ধে সেন্ট্রালি আমাদের ব্রিফ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ নিয়ে কথা বলেছেন। 

আরিফ বলেন, সিলেট বিভাগের সব দায়িত্বশীলকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে আপনি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলেন তা নিরসনে আমরা কাজ করছি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা মতে। মানুষের মাঝে যেন আমাদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নিয়ে কোনো আতঙ্ক না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের দু’দিন আগেই ব্রিফ করে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা এসব অপকর্ম করছে তারা যত শক্তিশালীই হোক তাদের ছাড়া হবে না। আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রথমে আমাদের বলা হয়েছে দলের হাইকমান্ডের বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে। আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেতার অবস্থান স্পষ্ট। কোনোভাবেই দল এদের (দুষ্কৃতকারী, ডেভিল) দায়ভার নিবে না। আমাদের এই অনুরোধ, আহ্বানে তারা যদি কর্ণপাত না করে তবে অবশ্যই দলের হাইকমান্ড তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, প্রয়োজনে আমরা তাদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করবো। প্রশাসনকেও এ বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিতে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যার অপরাধ যতটুকু তাকে ততটুকু শাস্তি পেতে হবে। কেউ তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তিনিও সমান অপরাধী, আশ্রয়দাতা। আরিফ বলেন, আমি যদি কাউকে রক্ষা করি আমাকে দল শাস্তি দিক। এতে কোনো ধরনের রাখঢাক বা বিচলিত হওয়ার দরকার নাই। 

তিনি বলেন, এই সেই সিলেট। আত্মাধ্যিক নগরী। এখানে রাজনীতি-সমাজনীতি সব কিছুতেই এক ধরনের সহনশীলতা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য। আওয়ামী জমানার শেষ সময়ে এসে সিলেটের সেই ঐতিহ্যকে নষ্ট করা হলো। এটা পরিকল্পিত। এর নেপথ্যে কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন তা সিলেটবাসী জানেন। সেই নেতাদের অনুসারীদের অনেকে এখন চট করে আমাদের দলে ভিড়তে শুরু করেছে! আমরা যাদের চিহ্নিত করতে পারছি, তাদের বের করে দিচ্ছি। আমাদের সকলকেই সজাগ থাকতে হবে নাগরিকদের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে। এতে রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিদের ভূমিকা রাখতে হবে। দেশ এবং দলের মঙ্গল চাইলে অবশ্যই আমাদের ক্ষুদ্র মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। বিএনপি চেয়ারম্যানের আদেশ-নির্দেশ পালনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে আমাদের আস্থায় নিতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অতীতে কি হয়েছে তা বাদ। পাড়া-মহল্লায় গ্রুপ করে আড্ডার দৃশ্য আমরা আর সিলেটে দেখতে চাই না।