Image description

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সংস্কার চায় খেলাফত মজলিস। তবে বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

 

আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন দলটির মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে ঐকমত্য পোষণ করেছি। ১০টিতে ঐকমত্য হয়নি, আর ১৫টিতে আংশিকভাবে একমত।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে করা সম্ভব। এটা অধ্যাদেশ জারি করে করা উচিত। বিদ্যমান সংস্কার নির্বাচনের আগেই সম্ভব।’

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আরও আলোচনার দরকার আছে মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, ‘দ্বিমতের বিষয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি, উনারা চেষ্টা করেছেন। একপর্যায়ে এসে আলোচনা ড্র হয়েছে। আরও সময় লাগবে। কিছু বিষয়ে উনারা বলেছেন, ‘‘বিবেচনা করব’’। আমরাও বলেছি, কিছু বিষয়ে আমরাও বিবেচনা করব। কৌশলগত কিছু বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হলে আমরা আপত্তি করব না।’

বহুত্ববাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে মহান আল্লার প্রতি আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে। বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রই এনাফ; উনারা অনেক যুক্তি দিয়েছিল। আমরা বলেছি গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা থাকলে সমাজে কোনো ধরনের বিভেদ থাকে না; বহুত্ববাদের কোনো প্রয়োজন নাই।’

সংবিধান পরিবর্তনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না খেলাফত মজলিস। এ ব্যাপারে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘৪০০ আসনেই নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার প্রস্তাব করেছি। সংসদের মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষে মত দিয়েছি। উচ্চকক্ষে (সিনেটে) সংখ্যানুপাতিকে ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের অনুরোধ করেছি।’

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে একটি বোর্ড থাকা উচিত। ব্যক্তিকে ক্ষমা দেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া উচিত না। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’

ইসলাম বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, ‘ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না তার বিধান সংবিধানে থাকতে হবে; এটা সামাজিক, ধর্মীয় স্থিতিশীলতা রাখার জন্য। এখানে ধর্মবিরোধী আইন করা হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আবদুল কাদের বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর যারা- আগামী নির্বাচনে তাদের আসার সুযোগ নাই। তাদের বিচার করতে হবে। বিচারের পরে কেউ যদি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন আসতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো সুযোগ নাই। অনেকের মতো আমরাও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে রাজি না। কারণ তারা খুন করে মানুষ মারার বিষয়ে ক্ষমা চায়নি।’

খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের ৭ সদস্যের দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে গোটা বিশেক দল তাদের লিখিত মতামত জানিয়েছে। এরপর গেল বৃহস্পতিবার থেকে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে ঐকমত্য কমিশন।