Image description

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের আট মাস পরও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরেননি। নির্বাচন সামনে রেখে তার ফেরার বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনী রোডম্যাপ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আমার দেশ দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার পরই তারেক রহমান দেশে ফেরার মনস্থ করেছেন।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত আবার পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। তাদের বক্তব্য, আগামী নির্বাচনে তিনি লন্ডন থেকে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। নির্বাচনের পর পরিবারসহ দেশে ফিরতে পারেন তিনি।

তারেক রহমান কবে দেশে ফিরতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য বিএন‌পির সভাপতি এমএ মালেক গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। ঢাকায় বাসাসহ সব প্রস্তু‌তি চলছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর দেশের মানুষের দাবি ছিল, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। কিন্তু প্রতিবেশী ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিএনপি অসন্তুষ্ট। দলটির আশঙ্কা, হাসিনার রেখে যাওয়া দোসর ও ভারতের ইন্ধনে নিরাপত্তার হুমকিতে পড়তে পারেন তারেক রহমান। তাই এখনই দেশে আসছে না তিনি।

বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। সে অনুযায়ী তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনই নির্দিষ্ট করে তারিখ বলা যাচ্ছে না। কারণ, সরকার নির্বাচন নিয়ে একেক সময় একেক রকম কথা বলছে। আমাদের দাবি, এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ দিয়ে ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণ করবে সরকার।

তিনি আরো জানান, দেশে ফিরতে তারেক রহমানের মামলা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই। তিনি এখন প্রায় সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশে আসতে সময় লাগছে। দেশে ফিরলে যাতে কোনো রকম নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে না হয়, তার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এদিকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে তার ওমরা করার কথা রয়েছে। ওমরা শেষে মা ও ছেলে একসঙ্গে নির্ধারিত সময়েই (এপ্রিল) ফিরতে পারেন। তবে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানের ফেরা এখনো নিশ্চিত না। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলে তিনি মায়ের সঙ্গে ফিরতে পারেন।

বিএনপির একজন আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে দুটি এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে এখনো দুটি মামলা বহাল আছে। বিগত সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার এবং পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশে ৩৭টি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৮৩টি মামলার তথ্য মিলেছে। এসব মামলার মধ্যে খালেদা জিয়ার ৩৫টি এবং তারেক রহমানের ৮১টি মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত কয়েক মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে অনেকই খারিজ এবং কিছু মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলা চলার মতো উপাদান না থাকায় কয়েকটি মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানকে এখনো দুটি মামলায় আইনি লড়াই করতে হবে। মামলাগুলো হলো, ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেডের ঋণ খেলাপির মামলা (অর্থঋণ মামলা নং- ২৩৭/২০১২- অর্থঋণ আদালত-১)। এটা হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত (writ petition No: 12453/2016)। উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়াও এই মামলার আসামি এবং দ্বিতীয়টি কাফরুল থানার একটি মামলা (নং- ৫২(৯)০৭।(৩৪১/২৩-আপিলের জন্য অপেক্ষমাণ)।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাব্বির আহমেদ হত্যা মামলার আসামিদের বাঁচাতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের।

ওয়ান ইলেভেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এসব মামলায় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন করে তার কোমরের হাড় ভেঙে দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি জামিন নিয়ে লন্ডন চলে যান।