
Khomenee Ehsan
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ, পিনাকী ও কনক সরওয়ারদের তৎপরতা সন্দেহজনক।
কারণ জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমনের পর সরকার প্রধান ড. ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারকে ঘনিষ্ঠ দেখা গেছে। সরকার উগ্রবাদীদের ওপর কঠোর হয়েছে এবং তাদেরকে ধরা হচ্ছে। এরমধ্যে মিয়ানমার ঘনিষ্ঠ আরসা নেতাকেও ধরা হয়েছে। ভারত তুলসি গ্যাবার্ডকে দিয়ে একটি গেইম খেলাতে চাইলেও ট্রাম্প প্রশাসন ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।
ঠিক এরকম একটা সময়ে পিনাকী ভট্টাচার্যরা সেনা প্রধানকে টার্গেট করে প্রচারণা শুরু করলো৷ এতে আবার হাসনাত আবদুল্লাহ অংশ নিল।
হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহ হলো এর আগেও সেনাপ্রধানের আমেরিকা সফরের সময় পিনাকীর কথায় তারা বঙ্গভবন ঘেরাও করতে গেছিল। ওই ঘটনার মাধ্যমে ছাত্রজনতা ও সেনাবাহিনীর সম্পর্কের অবসান ঘটে।
মূলতঃ জুলাই বিপ্লব তখন থেকে বিপ্লবের বদলে স্রেফ গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এখন আমাদের জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ বাদে আর কেউ জুলাই বিপ্লব বলে না।
ওই সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাকে আমি বলেছিলাম ড. ইউনূস, সেনাপ্রধান ও তোমরা গ্যাপ দূর করো। একসঙ্গে বসে পরষ্পরের কাছে পরিষ্কার করো যে তোমাদের মঞ্জিলে মকসুদ কী।
ওই সময় আমি নাহিদকে আমি বলেছিলাম, সেনাপ্রধান সঙ্গে না থাকলে তোমরা জিরো। তোমরা কিছুই করতে পারবে না। এক্ষেত্রে নাহিদ আমাকে দেশে ফেরার বিষয়ে ও বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক করানোর বিষয়ে কাজ করার কথা বলেছিল, আমি তখন বলেছিলাম কখন কিভাবে দেশে ফিরব এবং তার আগে আমাদের জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও তাদের দল কিভাবে মাঠে আসবে ও এক যোগে কাজ করবে।
এক্ষেত্রে বলে রাখি, আমি নাহিদদের সতর্ক করেছিলাম যে ভারতের নতুন এজেন্ট ফরহাদ মযহারদের বিষয়ে তারা যেন সতর্ক থাকে। কিন্তু ঘটনা হলো নাহিদ পরবর্তীতে আমাকে বলেছে তারা আসলে ফরহাদ মযহারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে, ফরহাদের সঙ্গে তাদের রেগুলার আলাপ হয়।
ফরহাদদের এই ঘনিষ্ঠতার কারণে আমি হাসনাত ও পিনাকীর ভূমিকা নিয়ে সতর্ক হতে ও সন্দেহ করতে বলছি।
কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আইকেবির বিরোধ রয়েছে। এ আইকেবির সঙ্গে আবার ফরহাদ মযহার ও নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটনের খাতির রয়েছে। এ খাতির থেকেই পিনাকী জেনারেল আইকেবির পক্ষে প্রচারণা চালায় এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে।
তাই তাদের সমীকরণ বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি বুঝতে জরুরি। তাহলে গুরুতর জাতীয় ইস্যুতে কার কী মতলব তা পরিষ্কার হবে।
যেমন আমিই সর্বপ্রথম সংবিধানবাদী সরকার গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে লেখলাম। আমি দাবি করলাম হাসিনা মোটেই রিজাইন দেননি। বললাম উপদেষ্টা পরিষদে সবাই ডিজিএফআই মনোনীত৷ একাজে শিবির ও ছাত্রশক্তির নেতারা ব্যহৃত হয়েছ। আমি বলেছি স্রেফ ড. ইউনূসই জনগণের লোক। আমার আস্থা ছিল আদিলুর রহমান খানেরও প্রতি, তার ত্যাগ ও ইনোসেন্সের কারণে, পরবর্তীতে তিনি কোন পজিশনে আছেন তা অবশ্য নিশ্চিত নই।
কথা হলো এসব কথা কেন বলেছি? কারণ ১৬ জুলাই আমি হাসিনার পতন ও পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের আইডিয়া ছাত্রনেতাদের দিয়েছি। আমিই ৩ আগস্ট এ আইডিয়া বাস্তবায়নে হাসিনা পতনের এক দফা ও বিপ্লবের রূপরেখা দিয়েছে। ওই রূপরেখা অনুযায়ী যেন পরিবর্তন হয় তার জন্য সংবিধান ও রাষ্ট্রপতি নিয়ে আলাপ দিয়েছি।
এক্ষেত্রে আমি বরাবর মাহফুজ আলম ও ফরহাদ মযহারদের আলাপের বিরোধিতা করেছি। যেমন মাহফুজ আলম মাস্টারমাইন্ড হলো অথচ কোথাও সে বলতে পারলো না যে ড. ইউনূসকে সরকার প্রধান করার কোনো পরিকল্পনা তার ছিল কি না এবং তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে মাহফুজরা কী কী পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে।
একইভাবে ফরহাদ মযহারও বলতে পারবে না ড. ইউনূসকে বিপ্লবের নেতা মেনে কী পরিবর্তন তিনি চেয়েছেন এবং কোথায় চেয়েছেন।
মূলতঃ ফরহাদ মযহার র'র হয়ে বিপ্লবী সরকারের নামে ড. ইউনূসকে অবৈধ বলে প্রচারণা চালান। র' জেনারেল আইকেবি ও উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর দুটি প্ল্যানে ব্যর্থ হওয়ার পর চুপ্পুকে সরিয়ে আইকেবিকে বসানোর মতলব করেছিল। এতেও তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
কিন্তু ফরহাদ মযহার-ছোটনরা দমেননি৷ তারা সরকার ও প্রশাসনে প্রচুর নিজস্ব লোক ঢুকিয়েছেন। অনেকগুলো উপদেষ্টা, ঢাকার মেয়র পদসহ বহু কিছু বাগিয়ে নিছেন।
সর্বশেষ ফরহাদ মযহার ও ছোটনরা এনসিপিকে দখল করতে পেরেছেন। এনসিপি জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে গাদ্দারী করে "তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার" স্লোগান অস্বীকার করেছে। তারা বাংলাদেশের মূল রুটস ১৯৪৭ এর মুসলিম জাতীয়তা ভিত্তিক স্বাধীনতার ভিত্তি অস্বীকার করে ভারতের দালালি ভিত্তিক শুধু একাত্তরকে গ্রহণ করেছে এবং সবকিছুতে একাত্তরের চেতনাধারণ করে চব্বিশ নিয়ে৷ শুধু ধাপ্পাবাজিই করেছে। যার বড় প্রমাণ হলো শিবিরসহ ইসলামপন্থীদের লড়াই ও অবদান অস্বীকার করা।
যাই হোক, আইকেবি-ফরহাদ মযহার-ছোটন জোটের হয়ে পিনাকীর সঙ্গে সঙ্গে হাসনাতের অবস্থানটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
দশ দিন আগে হাসনাত আবদুল্লাহ ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে মিটিং করে এতদিন চুপ ছিল। এখন পিনাকীর সঙ্গে মিলে সে গতকাল রাতে সরব হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে মাঠে নামানো হয়েছে শিবিরকে৷ ফরহাদ মযহারের চ্যালা মোহাম্মদ রোমেল আবার জামায়াতকে পামপট্টি দিয়ে লিখেছে।
হাহাহা খুবই দু্র্বল খেলা!
ড. ইউনূসের চীন সফরের আগে একটি ভারতীয় খেলা মাত্র। হাসনাত মনে আছে নিশ্চয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরুটা পাতানোই ছিল। এক ডিজিএফআই ডিরেক্টর ও পুলিশের এক ডিআইজি তোমাদের কর্মসূচিও ঠিক করে দিত। কিন্তু তোমরাই দেখেছ ভারতের পাতানো আন্দোলন কিভাবে হাসিনার পতন আন্দোলন হয়ে গেল। এবারও তোমরা ফেইল করবে।
মনে রাখতে হবে সেনাবাহিনীর দুটি পক্ষ, বিদেশী এজেন্সিসমূহের খেয়োখেয়ির মধ্যে ঢুকতে হয় না। এক্ষেত্রে ইনোসেন্ট হলেও চালানো যায়। কিন্তু আস্ত শয়তান হয়ে ইনোসেন্ট ভাব নিলেতো হবে না।
তোমরা হয়তো ভাবছ যে ক্ষিপ্ত সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে হচপচ লাগাবেন আর মাঝখানে ড. ইউনূস চীন সফরে যাবেন না, তিনি থেমে যাবেন? আরাকানকে ঘিরে ভারতের খেলা নতুন করে চলবে?
হিসাব এত সোজা না। ড. ইউনূসের সঙ্গে জেনারেল ওয়াকারের দূরত্ব থাকবে না, বিএনপির সঙ্গেও থাকবে না। মাঝখানে অর্বাচীনরা হটকারিতার মূল্য পাবে। কিন্তু জামায়াত একটা মজলুম পার্টি, তাদেরকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার মানে কি?