
উন্নত শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের মতো দুটি উপাদান আমাদের দেশে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ন্যায় বিচার নির্বাসনে, শিক্ষা ভাঙাচোরা।
না আছে এর (শিক্ষা) কোনো নৈতিক ভিত্তি, না আছে তার কোনো বৈশ্বিক মান। কিছুই নেই।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো.জসীম উদ্দীন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জামায়াতে ইসলামীর আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, মানুষ যখন নির্যাতিত হয় তখন আদালতের আশ্রয় নেয়। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন আশ্রয় নেয় হাসপাতালের। এই দুইটা জায়গা যদি ঠিক থাকে তাহলে একটা সমাজ মোটামুটি চলতে পারে। তবে আরও উপাদান আছে সমাজ সুন্দর করার জন্য। কিন্তু এই দুইটার কোনোটা বাদ দিয়ে কোনো সমাজ চলতে পারে না।
‘আবার যে সমাজে দুটি জিনিস নিশ্চিত হয়, সে সমাজ দুনিয়ার বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতে পারে। একটি হচ্ছে উন্নত শিক্ষা। আরেকটি হচ্ছে সামাজিক ন্যায় বিচার। যে সমাজে দুই উপাদান থাকবে অবশ্যই সেই সমাজের নাগরিকরা মর্যাদার এবং গর্বিত নাগরিক হিসেবে সব জায়গায় পরিচালিত করবে। ’
ডা.শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে দুঃখের বিষয় দুটি উপাদান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ন্যায় বিচার নির্বাসনে, শিক্ষা ভাঙাচোরা। না আছে এর কোনো নৈতিক ভিত্তি, না আছে তার কোনো বৈশ্বিক মান। কিছুই নেই। অনেক গুলো ইউনিভার্সিটি আমাদের দেশে। কিন্তু গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে কাছাকাছি কোথাও নেই। অথচ আমাদের বহু পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তারা ভালো পজিশনে, দুনিয়াকে লিড করছে, আলোতে আছে আমরা পড়ে আছি অন্ধকারে। শিক্ষার জায়গাটা যখন নৈতিকতা এবং বৈশ্বিকমানে উন্নত হয় তখন সমাজের সকল শ্রেণী বেনিফিট পাবে।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে জামায়তের আমীর বলেন, বিচারাঙ্গনে আপনারা যারা আছেন তাদের প্রতি একটা অনুরোধ । আপনারা (আইনজীবী) বিচারকের অংশ । আপনারাই তো বলেন- বার এবং বেঞ্চ হলো বিচার। সকল বিচারকের একজন বড় মহা বিচারক আছেন। শেষ বিচারের দিনে , সেদিন দুনিয়ার সকল বিচারক , আইনজীবী , ভিকটিম, সাক্ষী,সকলকে হাজির হতে হবে। সেই দিনটায় আল্লাহর বিচারে আমার অবস্থানটা কী? ওইদিন যে ছাড়পত্র পেয়ে যাবে সে পরম সৌভাগ্যবান। আর যে আটকা পড়ে যাবে তার গন্তব্যস্থল বড় ভয়ংকর।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ার নিয়ে ডা.শফিকুর রহমান বলেন, এই আদালতও অনেক আসামির সাজা কমিয়ে দিতে পারে। রাষ্ট্রপ্রধান টোটালি মওকুফ করতে পারেন। তার সেই এখতিয়ার আছে। সেই এখতিয়ার তিনি যখন প্রয়োগ করবেন তখন তাকে মাথায় রাখতে হবে যে ক্রাইম তিনি (যাকে মওকুফ করা হচ্ছে) করেছেন , তাকে যদি ছাড় দেওয়া হয় তাহলে এটার বেনিফিট তিনি এবং সমাজ সমানভাবে উপভোগ করবে? নাকি এই ছাড় পাওয়া ব্যক্তিটি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। কিন্তু দুঃখজনভাবে সত্য আমরা সচারচর প্র্যাকটিসে এটা দেখি না। আমরা তার ব্যতিক্রম দেখি। এখানে সাধারণত পলিটিক্যালি মোটিভেটেড হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ইয়েস, দুনিয়াতে পারবেন। কিন্তু আখেরাতে নিজেকে জাস্টিফাই করতে পারবেন না। সেখানে আপনি আটকা পড়ে যাবেন।
জেল জীবন নিয়ে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, জেলকে আমার অনেক ব্যাপারে সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। শাস্তি হিসেবে নিলে শুধুই কষ্ট পাবো দরকার নেই। আমি নিয়েছি সুযোগ হিসেবে। (আওয়ামী লীগ) সরকার আমার প্রতি খুবই আন্তরিক ছিলো। এই জন্য ৫ বছর পর পর নিয়ে যেতো রেস্ট হাউজে(জেলখানা)। আবার নিয়ে বলতো বহুদিন পরে আপনার আতিথিয়েতা পেয়েছি। তাড়াতাড়ি আপনাকে ছাড়বো না। থাকেন আমাদের সঙ্গে থাকেন। আমি সেইভাবে এনজয় করেছি।
বিচারাঙ্গণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সমাজে অনেক জায়গায় অসঙ্গতি আছে। এই অসঙ্গতিটা যদি সংস্কার করা যায়, এটাকে যদি ক্লিন করা যায়। সমাজের অর্ধেক যন্ত্রণা সয়ংক্রিয়ভাবে দূর হয়ে যাবে। আর বাকি যে অর্ধেক থাকবে, আমরা সবাই মিলে দূর করবো।
‘সঠিক রাস্তায় হাঁটলে সমাজের মুক্তি আসবে। বেঠিক রাস্তায় হাঁটলে কখনো আসবে না’ বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমীর।