
পালিয়ে থেকেই অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধান রায়। শেখ বাড়ির কৃপায় মাছ বিক্রেতা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান বনে যান তিনি। পশ্চিমবঙ্গের বামুনগাছিতে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পালিয়ে গিয়ে বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের নির্বাচনে খুলনা শহর ঘেঁষা জলমা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিধান রায়। হঠাৎ তার চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এক সময় পাঙাশ মাছের ব্যবসা করতেন বিধান রায়। এজন্য এলাকার মানুষের কাছে তিনি পাঙাস বিধান নামে পরিচিত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাছের ব্যবসার পাশাপাশি জমির দালালি শুরু করেন তিনি। সরকারি খাস জমি দখলের পর ভরাট করে সেগুলো বিক্রি শুরু করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। ২০১৪ সালে খুলনার রাজনীতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের প্রভাব শুরু হলে তিনি শেখ সোহেলের পেছনে অর্থ লগ্নি করা শুরু করেন। এরপর শেখ পরিবারের আস্থাভাজন হিসাবে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তিনি। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবি তুলে সেগুলো প্রচার করেন। ২০১৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর জলমা ইউনিয়নের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন বিধান রায়। এর আগে কখনো তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দেখেনি এলাকার মানুষ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। শেখ সোহেলের সরাসরি হস্তক্ষেপে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের পেছনে ফেলে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যান বিধান রায়। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে ওই ইউনিয়নের একাধিকবারের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মোল্লা ও আশিকুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেখ সোহেল দলীয় গুন্ডা দিয়ে দুজনকে উঠিয়ে নিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার চাপ প্রয়োগ করেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, শেখ সোহেল আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেন। যে কারণে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। তিনি বলেন, বিধান কয়েক বছরের ব্যবধানে বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। তার টাকার উৎস ছিল জমি দখল ও বেচাকেনা। অন্যের জমিতে রাতারাতি আটকে দিয়ে দখল স্বত্ব নিয়ে নিতেন। পরে সেই জমি বিক্রি করতেন। এভাবে অল্পদিনের মধ্যে বিপুল সম্পদের মালিক হন। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার সিংহভাগই বিধান ভারতে পাঠিয়ে দিতেন। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার বামুনগাছিতে কয়েক একর জমি কিনেছেন তিনি। সেখানে গড়েছেন আলিশান প্রাসাদ। বর্তমানে সেখান থেকেই বাংলাদেশের জমিজায়গা দেখভাল করছেন। অথচ দেশের প্রশাসন এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিধান রায়ের শহর লাগোয়া প্রায় ৩০ বিঘা জমি রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলায় দোতলা আলিশান বাড়ি রয়েছে। যা তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর করেছেন। এছাড়া তার ছেলে চন্দন রায় বটিয়াঘাটার বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেখান থেকে অনেক টাকা আয় ছিল। বিধান রায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেকে শেখ বাড়ির চেয়ারম্যান হিসাবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। কাজ না করেই টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটার টাকা ও চাল উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিধান রায় ভিজিডি, ইউপি ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি, ১% খাতের টাকা খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করতেন। এছাড়া নিজের লোকদের বিভিন্ন সরকারি কার্ড ও বরাদ্দ দিতেন এবং নিজের মনোনীত লোক দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করাতেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড, বিভিন্ন প্রকার ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মুজিব বর্ষের ঘর, সরকারি মাটি বিক্রি, ওয়ারেশ কায়েম বাণিজ্য, জমির সালিশসহ নানাভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা।
সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিষয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তন্নি বলেন, বিধান রায় ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তার সময়ের নানা অনিয়ম নিয়ে অনেকেই আসেন। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। চাইলে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমরা সহযোগিতা করব।