
দেশে অব্যাহতভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীদের দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাতে–দিনে প্রতিবাদ হচ্ছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু ৮ মার্চ নারী দিবসের বিভিন্ন আয়োজনে-অনুষ্ঠানে-আলোচনায় দেশের নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি সেভাবে উঠে আসেনি বলে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি (সহ-সভাপতি) শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। এই 'ক্ষোভ' থেকে এবং দেশব্যাপী নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও হেনস্তার প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে নারী দিবসের রাত থেকেই অবস্থান নেন ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের ফুটপাতে।
ইমি শুরুতে ওই অবস্থানে একা ছিলেন। পরে তার সঙ্গে সংহতি জানাতে আসেন কেউ কেউ। আজ শনিবার তাদের এই অবস্থানের অষ্টম দিন চলছে।
শামছুন নাহার হলের এ ভিপির পাঁচ দফা দাবির প্রথম দফা হলো— ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা এবং দ্রুত রায় কার্যকর করা। দ্বিতীয় দফা হলো–প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একটি ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করা। একইসাথে খানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত সহায়তা ও মানসিক সমর্থন সেবা দেওয়া হবে। এ দফাটি কার্যকর করতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তিনি।
দাবির তৃতীয় দফাটি হলো–নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-১৪ সংশোধনপূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও যুক্ত করা। চতুর্থ দফা হলো ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক,শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নেওয়া।
পঞ্চম দফা হলো–নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণী-স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একইসাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
এই এক সপ্তাহে সরকারের দায়িত্বশীল কেউ খোঁজ না নেওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি বলেন, ’সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে কেউই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি এবং আশা জাগানিয়া কোনো উদ্যোগও নেননি। লাগাতার প্রতিকূল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করার বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর দেখা দিয়েছে। সরকার এভাবে দিনের পর দিন নাগরিকদের সাথে এ রকম অবহেলামূলক আচরণ করতে পারে না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা আমাদের সুস্পষ্ট ৫টি দফা পেশ করেছি।
ইমি আরও বলেন, '৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল। নারী দিবসের বিভিন্ন আয়োজনে আমার মনে হয়নি যে নারীদের নিরাপত্তা এবং আমাদের কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি সেভাবে আলোচনায় উঠে এসেছিল। তখন আমি আরও বেশি ক্ষুব্ধ হই। আমার মনে প্রশ্ন জাগে—নারীদের আয়োজনে নারীদের সমস্যা কেন অ্যাড্রেস করা হচ্ছে না? এসময় আমার মনে হয় যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। কিছু একটা করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসা এবং অবস্থান নেওয়া।'