
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতাদের ‘বাবা’ সম্বোধন করে তাঁদের সতর্ক করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা অনেক বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছ, কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব পালন বাকি আছে। একাত্তরে আমরা যে সুযোগ নষ্ট করেছি, তোমরা সেই সুযোগটা নষ্ট হতে দিও না। তোমরা আমাদের জুলাইয়ের নেতা ছিলে, আরও অন্তত পাঁচ-দশ বছর আমাদের নেতা থেকে রাষ্ট্রকে একটা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিও। এটাই আমার প্রত্যাশা।’
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা ছিলেন আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্দেশে অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি তোমাদের ওয়ার্ন (সতর্ক) করে দিই, বাবা, অনেক কষ্ট ও অপেক্ষার পর আমরা তোমাদের পেয়েছি। তোমরা একটা নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন ও সুযোগ আমাদের সামনে হাজির করেছ। বস্তুতপক্ষে, নব্বই সালেও এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। একাত্তরের পর প্রথমবার এল। এ রকম সুযোগ আবার হয়তো ৫০ বছর পর আসবে। তোমরা অনেক বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছ, কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব পালন বাকি আছে। একাত্তরে আমরা যে সুযোগ নষ্ট করেছি, তোমরা সেই সুযোগটা নষ্ট হতে দিও না। তোমরা আমাদের জুলাইয়ের নেতা ছিলে, আরও অন্তত পাঁচ-দশ বছর আমাদের নেতা থেকে রাষ্ট্রকে একটা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিও। এটাই আমার প্রত্যাশা।’

জুলাই শুধু ট্র্যাজেডির (বিয়োগান্তক) গল্প নয়, জুলাই বিজয় আর সাহসেরও গল্প বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই একটা গল্প আছে। তাঁদের কেউ মরে গেছে, কেউ আহত, কেউ কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছে। সবার অভূতপূর্ব আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেটাকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই জুলাইয়ের আত্মদান ও সব স্তরের মানুষের সামষ্টিক প্রত্যাশা সার্থক হবে। রাষ্ট্রবস্থাকে সংস্কার করতে হবে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বই সম্পর্কে আসিফ নজরুল বলেন, এই বইয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে, এর ভাষা অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ ও প্রাঞ্জল। বইটার মধ্যে গল্প আছে, সাহসের বর্ণনা আছে, কষ্টেরও বর্ণনা আছে। আন্দোলনের সময়কার অনেক উদ্ভাবনী আইডিয়ার অনেক কথাও এতে আছে। সম্মিলিত অভিজ্ঞতার একটা অভূতপূর্ব বর্ণনাও পাওয়া যাবে এই বইয়ে। বইটিতে আসিফ মাহমুদ অনেক কিছুই অকপটে বলেছেন। তবে বইটার একটা সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি অনেক সংক্ষেপে লেখা হয়েছে। কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ থাকলেও চরিত্রের উল্লেখ নেই।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার জানামতে, এই বইয়ের (আসিফ মাহমুদের বই) একটা তথ্যও মিথ্যা নয়। কিন্তু আমাদের এখানে অবিশ্বাস্য মিথ্যার চর্চা শুরু হয়েছে।... জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্রভাগের নেতাদের নিয়ে যখন অবাধ ও জঘন্য মিথ্যাচার চলে, মনে রাখতে হবে এটা জুলাইয়ের শত্রুদের কাজ। এই মিথ্যাচারকে উন্মোচিত করতে হবে।’