
দুই সপ্তাহ পরে ঈদ। কিন্তু এ সময়ে তেমনটা জমে ওঠেনি রাজধানীর ঈদ বাজার। অন্যান্য বছর এই সময়টা ঢাকার ফুটপাথ থেকে শুরু করে শপিংমলে পা রাখার উপায় থাকতো না। ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক আগেই জমজমাট হয়ে উঠতো মৌচাক মার্কেট। ক্রেতাদের তীব্র চাপে হাঁপিয়ে উঠার উপক্রম হতো বিক্রেতাদের। অথচ এ বছর কিছু কিছু শপিংমলের ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। বিক্রেতারা ক্রেতার অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু মার্কেটে জমে উঠেছে কেনাবেচা। এ ছাড়া নামিদামি অভিজাত পোশাক শো-রুমগুলোতেও ক্রেতার কমতি নাই। মালিবাগের মৌচাক মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। শুধু মৌচাক মার্কেট-ই নয়, অলস আর বিক্রিতে ভাটা কাঁধে নিয়েই দোকান খুলে বসেছেন মৌচাক মার্কেটসহ রাজধানীর শপিংমলগুলোর ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা বলছেন, আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর একেবারেই বিক্রি নেই। ক্রেতা নেই, বিক্রির বড় অংশ হতো ইফতারের পর, যা এখন দিনের বেলা হওয়া বিক্রির তুলনায়ও কমে গেছে। ক্রেতাদের মধ্যে বেড়েছে আতঙ্ক আর সতর্কতা। তাদের বড় অংশই দিনেরবেলায় করে নিচ্ছেন ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার অপরাধ জগতে অস্থিরতা চলার কারণে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রকাশ্য বেশ কিছু ছিনতাইয়ের ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে রমজানের আগে থেকে মানুষ বাইরে চলাফেরায় সতর্ক। আর রমজানে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে যারাই বের হচ্ছেন তাদের সঙ্গে নগদ টাকা থাকছে। তাই ক্রেতাদের মধ্যে নানা শঙ্কা কাজ করছে। বিশেষকরে রাতের বেলা যারাই মার্কেটে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
সরজমিন রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, মগবাজার বিশাল সার্কেল শপিং সেন্টার, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও নিউমার্কেটসহ উল্লেখযোগ্য শপিং সেন্টারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, দিনের মধ্যভাগেও ক্রেতাশূন্য বেশির ভাগ দোকান। মৌচাক মার্কেটের শাড়ি, থ্রি-পিছ, জেন্টস আইটেম ও জুয়েলারি দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেল দু’একজন ক্রেতা আসছেন, কেউ কিনছেন কেউ কেবল দেখছেন। দোকানিদের কেউ কেউ ঝিমুচ্ছিলেন দোকানে। কেউ ক্রেতার অপেক্ষায় দোকানে সামনে অপেক্ষা করছেন। দু’একজন ক্রেতা আসলে ডাক দিচ্ছেন তাদের। মগবাজার বিশাল সার্কেল শপিং সেন্টারের বড় বড় যে কয়েকটি দোকান রয়েছে সবগুলো দোকানই ক্রেতাশূন্য। একেকটি দোকানে ৫/৬ জন করে কর্মী থাকলেও সকলেই বসে ছিলেন, আর অপেক্ষা করছিলেন ক্রেতাদের জন্য। অন্যদিকে, অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেলেও মূলত ক্রেতা সমাগম আগের তুলনায় বেশ কমেছে। কিছু কিছু দোকান দেখা গেছে যেখানে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পণ্য সাজিয়ে রাখলেও একজনও ক্রেতা নেই। হাতে গোনা কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের আউটলেটগুলোতে কিছুটা ভিড়-ভাট্টা লক্ষ্য করা গেছে। বন্ধের দিন নিউমার্কেটের দোকানগুলোতে দিনের বেলা তীব্র ভিড় দেখা গেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের ঈদের বাজারে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে এবার। মানুষ আস্থা রাখছেন দেশি পণ্যে। পূর্বে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পণ্যের আমদানি। তাই দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ক্রেতারা বাধ্য হয়েই ঝুঁকছেন দেশি পণ্যে। তাছাড়া বিক্রেতারা বলছেন ভারতীয় ও পাকিস্তানি পণ্যের আদলে এখন দেশীয় অনেক কোম্পানি তৈরি করছেন পোশাক। যা বিদেশি পণ্য বলেই চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকলেরই একই অভিযোগ, ক্রেতাদের মধ্যে ঈদের কেনা-কাটা নিয়ে এ বছর তেমন উৎসাহ নেই। তার বড় কারণ দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে রাতে বের হতে এখন নিরাপদ মনে করেছেন না। কেনাকাটা করতে হলে দিনের আলোতে করে নিচ্ছেন। বিক্রেতাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্যও হারিয়েছেন ক্রেতা। পূর্বে ইফতারের পর, অর্থাৎ সন্ধ্যায় কিংবা রাতের দিকে বিপণীবিতানগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করলেও এখন বরঞ্চ সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম কমে যাচ্ছে।
বিক্রি নেই জুয়েলারির: মৌচাক মার্কেটের জুয়েলারি দোকানের বিক্রেতারা বলছেন, সার্বক্ষণিক অলস বসে সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের। আগে ঈদকে ঘিরে রমজানের প্রথম ১০ দিনেই ব্যাপক কেনা-বেচা চলতো। যা এখন নেই। বনলতা জুয়েলার্সের মিজানুর রহমান বলেন, এখন মৌচাক মার্কেটে লোক নেই, এটা বিশ্বাস করা যায়? পুরো মার্কেট দেখেন, কোথাও লোক নেই। আমরা না হয় জুয়েলারি বিক্রি করি দাম বেশি। কিন্তু অন্য কোনো দোকানেই ক্রেতা নেই দেখেন। খুবই খারাপ অবস্থা। এইযে দোকান শূন্য, এভাবেই থাকে সারাক্ষণ। এবার ঈদের আগ পর্যন্ত ও বাড়বে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত আমরা। কেয়া জুয়েলার্সের দিলিপ কুমার বলেন, এখন যেভাবে দোকান সুনসান দেখতে পাচ্ছেন ঠিক বন্ধ করার আগ পর্যন্ত দশা। কোনো ক্রেতা নেই।
কিছুটা ভিড়ভাট্টা নামিদামি আউটলেটে: বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির আউটলেট ও শো-রুমগুলোতে অন্যসব দোকানের তুলনায় ভিড় ক্রেতাদের। শো-রুম ও আউটলেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিড় থাকলেও বিক্রি ও কাস্টমার দুই-ই কমেছে। রাতের অংশে আর আগের মতো আসছেন না ক্রেতারা। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল টুয়েলভ’র কর্মচারী সাব্বির বলেন, যদি আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করি, এ বছর বিক্রি বাড়েনি। বরং কমেছে। আর এখন ক্রেতারা দিনের বেলায়ই আসেন। সন্ধ্যার পর আগের বছরগুলোতে বেশি আসতো, কিন্তু দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা দিনের বেলায়ই বেশি আসছেন। জেন্টেল পার্কের ইনচার্জ বলেন, আমাদের এখানে সত্যি বলতে প্রতি বছরের মতো এখন নেই। তবে ছোট দোকানগুলোতে যেমনটি আছে এখানে এরচেয়ে কিছুটা বেশি আছে। দিনেই বেশি বিক্রি হয়। ইফতারের পরের সময়টায়ও ক্রেতা বাড়ছে না। বরং কমে যাচ্ছে। আমাদের এখানে সব নিত্যনতুন কালেকশন। চাহিদার তুঙ্গে আছে কাবুলি।