
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগমুক্ত হয়। পরে নানা পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শেকৃবি) নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ছাত্ররাজনীতি। তবে এখন ওই নিষেধাজ্ঞা আছে শুধু কাগজে কলমে। ছাত্রদল ও শিবির প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রথমদিকে ছাত্রদলের কার্যক্রমের বিরোধিতা করলেও শিবিরের কর্মসূচি নিয়ে কোনো কথা নেই শেকৃবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলদের নেতাদের। নীরব দর্শকের ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও।
গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শেকৃবিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সব ধরনের দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে সময় আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সরব জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। নিয়মিত চলছে তাদের মিছিল-মিটিং। অপরদিকে মিছিল না করলেও দাওয়াহ ও বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ও বাকস্বাধীনতাবিরোধী দাবি করে শুরু থেকে এর বিরোধিতা করে শেকৃবি ছাত্রদল। গত ৭ অক্টোবর বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার শাহাদাৎবার্ষিকীতে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও স্মরণ সভা করে ছাত্রদল। এরপর ১৭ অক্টোবর প্রশাসনের নিকট ৩৬ দফা সংস্কার দাবিতে স্মারকলিপি দেয় তারা। এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম করে যাচ্ছে সংগঠনটি। কিছু কিছু প্রোগ্রামে শিক্ষকদেরও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
ছাত্রদল সভাপতি আহমেদুল কবির তাপস দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি দায়িত্বের ভিসিকে এক রকম জিম্মি করে তখন যে দাবি আদায় করা হয়েছে- তা কখনো কাম্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ওই ক’জন স্টেকহোল্ডার না। যারা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল আপনি তাদেরও নিষিদ্ধ করবেন? আমার মনে হয় এখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হবে।
অপরদিকে ভালো অবস্থান থাকলেও প্রকাশ্যে আসতে অনাগ্রহ দেখা যায় শেকৃবি ছাত্র শিবিরের। প্রকাশ্যে না এসেই গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাসে সংগঠনটির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশনা উৎসব আয়োজনের অনুমতি চায় শিবির। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে আপত্তি জানালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশনা উৎসবের ঘোষণা দিয়েই সামনে আসে সংগঠনটি। এতে শেকৃবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম জানা গেলেও এখনো অগোচরে অন্য নেতাকর্মীরা। প্রকাশনা উৎসব করলেও নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীনবরণ ও ইফতারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন, পরে প্রোগ্রামটি ক্যা¤পাসের বাইরে করার উদ্যোগ নেয় তারা।
শিবিরের কার্যক্রম বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আবুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিষিদ্ধ বলতে এখানে লেজুড়বৃত্তিক কোনো দলীয় স্বার্থ বা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের রাজনীতি না হোক সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা চেয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মূলত ছাত্রদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম করে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় সে রাজনীতির চর্চা শিবির করে না।
ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে শেকৃবি উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো তাদের। শিক্ষার্থীরা চেয়েছে প্রশাসন নিষিদ্ধ করেছে, তারা চাইবে ওটা (ছাত্ররাজনীতি নিষেধাজ্ঞা) উঠায়ে নেব। এখন ছাত্ররা তাদের মতো করে কিছু কার্যক্রম করে এটা আমাদের অনুমতির বাইরে, আমরা কাউকে অনুমতি দেই না।