
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি। ৫ আগস্টে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পালটে গেছে এই আসনের ভোটের সমীকরণ।
যদিও দেশ স্বাধীনের পর ১২টি নির্বাচনের ৮টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায় বিএনপি। পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও। একক প্রার্থী নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে জামায়াত। বিএনপিতে চার নেতার দৌড়ঝাঁপ চলছে।
দীর্ঘদিনের জোট মিত্র বিএনপি-জামায়াত এবার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসাবে ভোটের হিসাবনিকাশ ভিন্ন হতে পারে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়, গণসংযোগ, বস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ প্রভৃতি কর্মসূচিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় অন্তত চারজনের নাম রয়েছে।
তারা হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসূল।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জহুরুল হক জহির, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল, ইসলামী আন্দোলনের অ্যাডভোকেট বায়েজিদ হোসেন ও অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মাসুম বিল্লাহর নাম শোনা যাচ্ছে।
জানা যায়, যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে যশোর-৪ আসন গঠিত। দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা এবং ১৮টি ইউনিয়নের এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, ১৯৮৬ সালে শাহ হাদিউজ্জামান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, ১৯৯১ সালে শাহ হাদিউজ্জামান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নজরুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালে শাহ হাদিউজ্জামান এবং ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের জাপার (নাফি) এমএম আমিন উদ্দিন বিজয়ী হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে টানা চারবার আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় নির্বাচিত হন।
এবার আসনটিতে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে সেই নির্বাচনেও পরাজিত হন। এবারও তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জোরেশোরে প্রচারণায় রয়েছেন। তার বিকল্প হিসাবে ভোটের মাঠে সরব আছেন অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই মনা এবং যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। আমার নামে ৩৪টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। অন্তত আটবার কারাবরণ করেছি। দল ত্যাগী ও নিবেদিতদের মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী।
তিনি বলেন, দুঃসময়ে যাদের দেখা যায়নি, তাদের অনেকেই এখন অতিথি পাখির মতো দলের মনোনয়ন পেতে চায়। এদের বিষয়ে তৃণমূল সতর্ক আছে।
ফারাজী মতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। আশা করি এবার দলের মনোনয়ন পাব। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছি। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। বিগত সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। ২৭টি মামলার আসামি হয়েছি। কয়েকবার কারাবরণ করেছি।
অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ঋণখেলাপি, দুর্নীতির অভিযোগ আছে-এমন কাউকে দল মনোনয়ন দেবে না বলে জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের তরুণ ও ত্যাগী নেতারা মনোনয়ন পাবেন। আমি ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসূল প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে আমরা কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ কাজ করেছি। জনগণের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।