Image description
দিল্লি ইস্যুতে ড. ইউনূসের সুরে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না!

‘স্বর্ণলতা’ চমৎকার নাম, অথচ মেদরুদ-হীন পরজীবী উদ্ভিদ। সোনালি রঙের দেখতে চমৎকার এই উদ্ভিদ অন্যের উপর নির্ভর করে বংশ বিস্তার করে। ১৯৪৯ সালে জন্ম নেয়া আওয়ামী লীগকে একসময় মনে করা হতোÑ দেশের মাটি ও মানুষের দল। সেই দল ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে স্বর্ণলতার মতোই দিল্লির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মেরুদ- না থাকায় স্বর্ণলতা যেমন অন্যগাছ জড়িয়ে ধরে বংশ বিস্তার করে; শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগও তেমনিই ভারতের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি চর্চা করেছে। ভারত নির্ভরতার শেষ পরিণতি কী হলো? ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর দেশে দলটি কার্যত অস্থিত্বহীন।

দেশ এখন রাজনীতি এবং স্বাধীন মত প্রকাশের উর্বর ভূমি। একাত্তরে স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করলে অন্যদের রাজনীতিচর্চা নিষিদ্ধ হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর রাজনীতির ওপর কিছুদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা’ তুলে দেয়ার পর রাজনীতি কার্যত ঘরবন্দি ছিল। ২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন জামায়াতের অফিসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হয়নি এবং দলটি বন্ধ হলঘরে সভা-সেমিনারের মধ্যেই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‌্যাব ও সংস্থাটির সাতজন কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিএনপি বাধা-বিপত্তির মুখেও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মুক্তবাজারে রাজনীতির দরজা খুলে যায়। এখন ভয়-ভীতিহীন রাজনীতি চর্চা চলছে। কবি হেলাল হাফিজের ভাষায়Ñ ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের চলমান মুক্ত বাতাস কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোর ‘যৌবক সময়’ ধরে নেয়া যায়। এ সময় দলগুলোকে বাধাহীনভাবে জনগণের কাছে গিয়ে নিজেদের রাজনীতির চিন্তাচেতনা শোনাবেন; জনগণ তাদের পক্ষে আসবে। এতে জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কী চায় সেটিও বোঝা যাবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কি সে সুযোগ নিচ্ছে?

এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে তাদের রাজনীতির পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী ভারত নীতিতে দলটির অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে। প্রবাদে রয়েছেÑ ‘আত্মীয় পরিবর্তন করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না।’ কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ভারত এমন প্রতিবেশী যে, ওই দেশটির সঙ্গে প্রতিবেশী কোনো দেশের সুসম্পর্ক নেই। নেপাল, পাকিস্তান, চীন, মালদ্বীপ সবার সঙ্গে দা-কুমড়া সম্পর্ক। ভুটান ও শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক। কেবল হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল! প্রখ্যাত দার্শনিক ও দেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের ক্রীতদাস। দিল্লি যেভাবে নির্দেশ দিতো হাসিনা ক্রীতদাসের মতো সেভাবে দেশ চালিয়েছেন।’

মূলত সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করায় ‘পালানোর পর দিল্লিতে আশ্রয়’ পেয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ প্রতিবেশী ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্রের বদলে শত্রু দেশ মনে করছে। হাসিনাকে বিশ্বের কোনো দেশ আশ্রয় না দিলেও দিল্লি আশ্রয় দিয়েছে। অতপর গত সাত মাসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত যা করেছে তাতে ওই দেশকে বন্ধুদেশ মনে করার কোনো কারণ নেই। গত ৭ মার্চ গুলশানের একটি হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে অনেকগুলো দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। অথচ সেখানে ভারতের হাইকমিশনার প্রণব ভার্মাকে নিয়ে বিএনপির নেতাদের অতিমাত্রায় মাখামাখি দেখা গেছে; যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। যে ভারতের ‘র’ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চুরমার করার চেষ্টা করছে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করছে, ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা করেও সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গত কারণে ভারতের প্রতি সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের এরশাদকে জোর করে নির্বাচনে নেয়ার কাহিনী সবার জানা। ওয়েস্টিন হোটেলের ইফতার মাহফিলে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনীতিকদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের টেবিলে না বসিয়ে প্রণব ভার্মাকে বসানো হয়। বিএনপির নেতাদের অতি মাখামাখিতে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলছেন, দিল্লির সমর্থন ছাড়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয় বিএনপির নেতারা এখনো কী সেটি মনে করছেন? তা না হলে তো উন্নয়ন সহযোগী চীন, জাপান, ইইউ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, ইফতারে দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদকদের হাস্যোজ্জ্ব¡ল দেখা যায়। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ধারা ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অনেক গণমাধ্যমের সম্পাদকদের দেখা যায় না। এ দৃশ্য দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের কেউ কেউ বিএনপির ইফতারে হাস্যোজ্জ্ব¡ল ওই সম্পাদকের পত্রিকায় ছাপানো লেখা ‘তারেক রহমানের বিচার করতে হবে’ জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। একদিনে ‘ছবিসহ তারেকের বিচার দাবির’ প্রবন্ধ অন্যদিকে ওই লেখকের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে; যা বিএনপির জন্য বেমানান।

নেটিজেনদের অনেকেই লিখেছেন, দিল্লির সূর্য ঢাকায় অস্তমিত হয়েছে। এখন আর দিল্লির লেজুড় ধরে কোনো দলের লাভ হবে না। জামায়াত যতই লাফালাফি করুক; নির্বাচন হলে বিএনপির এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিবেশ বিদ্যমান। কিন্তু দলটির নেতাদের জনগণের চিন্তা-চেতনা ও মনন বুঝতে হবে। দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে মাখামাখি কমাতে হবে। কারণ জনগণকে আর ফাঁকি দেয়া যাবে না। শ্রীলঙ্কায় গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের মনন বুঝতে না পারায় নির্বাচনে বিরাট বিরাট দলের প্রভাবশালী নেতাদের কম বয়সী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকের হাতে ধরাশায়ী হতে হয়েছে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করেছেন। রাজনীতির মাঠে তারা এখন হাসিনার বিচার এবং ভারতের চানক্যনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। সংগঠনিক ভীতি দুর্বল হলেও মানুষ যা শুনতে চায় তারা সে আওয়াজ তুলছেন। ফলে ব্যাপক জনসমর্থিত বিএনপিকে ভারতনীতি সুস্পষ্ট করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ভারতনীতি কেমন হবে মানুষ আগেই বুঝতে চায়। কারণ দিল্লির সঙ্গে মাখামাখির রজানীতি মানুষ পছন্দ করছে না। দিল্লির সঙ্গে মাখামাখি করে লেন্দুপ দর্জি সিকিম খুইয়েছেন। হাসিনা ১৫ বছরে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেছে। মানুষ দিল্লির দাসত্বের রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এরপর সংসদের সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করা হয় রনিল বিক্রমাসিংহেকে। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে রনিলের বিরুদ্ধে। তাদের দল ছিল সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী। কিন্তু তারা জনগণের মনমতো কাজ করতে পারেননি। বিপরীতে দুর্নীতিবিরোধী ও গরিবমুখী নীতির প্রচারণা চালিয়ে জনপ্রিয়তা পান ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে। নতুন এ নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেসহ ৩৯ জন প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন। এতে বোঝা যায় দল যত শক্তিশালী হোক এবং নেতা যত বড়াই হন না কেন, জনগণের মনন অনুযায়ী কাজ না করলে বিজয়ী হওয়া কঠিন।

শেখ মুজিবের নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে প্রচারণা থাকলেও মুজিব জানতেন না যে, ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তান কারাগার থেকে বের হয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন শেখ মুজিব। অতপর মুজিব-ইন্দারা চুক্তির মাধ্যমে বেরুবাড়ি ভারতকে দিয়ে দেয়া এবং চুক্তি করে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ার পর আমজনতা মুজিবের হাতে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ’ মনে করতেন না। কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ’ মনে করতেন। প্রতিবেশী ভারত ইস্যুতে ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ প্রবাদের মতো কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের মনন বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তার হাতেও ‘বাংলাদেশ নিরাপদ’ মনে করতেন। শেখ হাসিনা যেহেতু রাজনীতির নামে বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন, দিল্লির ক্রীতদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলেছিলেন। সে কারণে দেশের ১৮ কোটি মানুষ চায় ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিহত করে দেশের সার্বভৌম নিরাপত্তা। ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘অতি মাখামাখি’ সে বার্তা দেয় না। দিল্লির সঙ্গে মাখামাখি এবং ভারতের অনুকম্পা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার যারা স্বপ্ন দেখেন তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, জনগণ এমনটিই মনে করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুযায়ী, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে যুদ্ধক্ষেত্রেও শত্রুর সঙ্গে কথা বলতে কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করতে হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েও তিনি কথাবার্তায় দিল্লিকে ছাড় দিচ্ছেন না। কারণ বাংলাদেশ ধ্বংসের হোতা মাফিয়া গডমাদার শেখ হাসিনাকে তারা আশ্রয় দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার চেয়ারে বসেও তিনি ভারতের মুখোশ খুলে দিতে কার্পণ্য করছেন না। হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিবাদে তিনি কঠোর এবং দৃঢ়ভাবে চাপের রাখার চেষ্টা করছেন ভারতকে। অথচ ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিএনপির কিছু নেতার ভাবখানা যেন তারা ক্ষমতায় রয়েছেনÑ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কারণে দিল্লির বিরুদ্ধে শব্দ উচ্চারণ করছেন না। অথচ তাদের রাজনৈতিক শত্রু শেখ হাসিনাকে দুধকলা দিয়ে পুষছে ভারত। তাছাড়া এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল ছিল বিএনপিকে গালিগালাজ করা। বিএনপিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি’ ‘ক্যান্টনমেন্টের দল’ ইত্যাদি বলে টিপ্পনী কাটত আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা নেই। বিএনপি এখন টক্কর দেয়ার মতো রাজনৈতিক শক্তি নেই। ফলে বিএনপির নেতাদের আরো জনগণের কাছাকাছি যাওয়া এবং তাদের প্রত্যাশা-চাওয়া-পাওয়াগুলো জানা ও বোঝা উচিত। কিন্তু দলটির কয়েকজন নেতার হাবভাবে মনে হচ্ছে, তারা এখনো মনে করছেন দিল্লির আশীর্বাদ ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এক যুগ আগেও ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ঢাকা সফরে এলে বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরও বেগম জিয়া তার সঙ্গে দেখা করেননি। খালেদা জিয়ার ‘প্রণব বর্জন’ নিয়ে দেশ-বিদেশে হইচই পড়ে যায় এবং বিতর্ক করা হয়। এক যুগ পর মানুষ জানতে পারছেÑ ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বর্জন করে বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ওই প্রণব মুখার্জি তার বইয়ে লিখেছেন ওয়ান-ইলেভেন ঘটানো সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমদের চাকরির নিশ্চয়তা ভারত দিয়েছিল। বিএনপির এখনকার নেতাদের বুঝতে হবেÑ ভারত কখনোই তার আগ্রাসী আচরণ থেকে সরে আসতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল নিজেদের স্বার্থেই। তারপর বাংলাদেশের বিপুল সম্পদ নিয়ে তারা চলে গেছে। মেজর (অব.) জলিল বাধা দেয়ায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। মুজিবের পথ ধরে চলেছে হাসিনা। শেখ হাসিনার শাসনামলে দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করায় ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যায়নি। কিন্তু এখন ‘দিল্লির চোখে চোখ রেখে ঢাকার কথা বলায়’ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বানেতাদের কান ভারী করে তুলছে ভারত। বিদেশে পাচার করা কোটি কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিয়োগকৃত লবিস্টদের ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্করা নানাভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশের মানুষ ‘ভারত বর্জন’ চেতনা ধারণ করছে। গত কয়েক মাসে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচিতে সবস্তরের মানুষের সমর্থন এবং বিএনপির সিনিয়র এক নেতারা স্ত্রীর কাপড় ও গায়ের চাদর খুলে রাজপথে আগুন দেয়ার ঘটনায় ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে দৃশ্যপটে আওয়ামী লীগ নেই। বিএনপি নেতারা ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ‘ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না’-এমন মানসিকতায় থাকেন, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশে জোয়ার-ভাটার দেশ। কোনো দলের জনসমর্থন সব সময় এক ধরনের থাকে না।

৭৫ বছর আগে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে গঠিত আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা ধরে রাখতে ‘স্বর্ণলতা’র মতোই দিল্লিকে আঁকড়ে ধরেছিল। পরিণতি দেশবাসী দেখছে। বিএনপির কিছু নেতার উচিত ‘দিল্লির অনুকম্পা ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না’-এমন মানসিকতা থেকে সরে আসা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করেছে। তাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন মুখিয়ে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উপদেষ্টাদের অনেকেই নতুন দলের প্রতি সহানুভূতিশীল। তা ছাড়া তারা এখন পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশিত ‘ভারত খেদাও’ ‘হাসিনার বিচার’ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার নির্বাচনের দিকে তাকালে কি দেখি? সাবেক প্রেসিডেন্ট অনিল বিক্রমাসিংহ এবং গুপ্তহত্যার শিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ প্রেমাদাসা পরাজিত হয়েছেন জনপ্রত্যাশা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায়। ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের অনুড়া কুমারা দিশানায়েক বিজয়ী হয়েছেন শুধু জনগণের কাছাকাছি থাকার কারণে। সময় থাকতেই বিএনপির দায়িত্বশীলদের জনগণের মন বোঝার চেষ্টা করা উচিত।