Image description
এক মাসের জন্য ১০০০ জনকে নিয়োগের চিন্তা, পাবেন সম্মানী। নিয়োগ দেওয়া হবে এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্য থেকে। গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, অপব্যবহারের আশঙ্কা।

ঈদের আগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শপিং মল ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশের সহযোগী হিসেবে প্রায় এক হাজার বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীকে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি। তাঁরা সম্মানী পাবেন এবং পুলিশের মতো আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছেন। আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা তাঁদেরকে দেওয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষদের অনেকে মনে করছেন, পুলিশকে সহায়তাকারী কর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিলে তার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই ক্ষমতার জোরে তাঁরা যে সাধারণ মানুষকে আটক করে হয়রানি করবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই। আটক-বাণিজ্যের অভিযোগ একসময় পুলিশের বিরুদ্ধে ছিল।

ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের জনবলসংকটের কথা তুলে ধরে ঈদের আগে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পুলিশের ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ডিএমপির আইনবলে অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা তাঁর আছে। সেই মোতাবেক তিনি তাঁদের নিয়োগ দিচ্ছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

ডিএমপির সূত্র বলেছে, অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যদের নির্বাচন করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগে থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা কর্মীদের মধ্য থেকে। তাঁরা শুধু নির্দিষ্ট এলাকায় পুলিশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন এবং তাঁদের কার্যক্রম তদারকি করবেন বিট পুলিশের কর্মকর্তারা। এক মাসের জন্য এ দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫ রমজান থেকে এই ফোর্স মাঠে নামতে পারে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক দেশেই সাহায্যকারী পুলিশ ফোর্স রয়েছে। তবে তাদের নির্বাচনের পর নিজের প্রতিরক্ষা কৌশল, টহল কৌশল, ফৌজদারি আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয় তাঁদের। কিন্তু ঢাকা মহানগরে অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ হচ্ছে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও পেশাদারত্বের জ্ঞান ছাড়াই।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, রাজধানীবাসী এতে উপকৃত হবেন।’

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান চালালেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শপিং মল ও মার্কেট গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে, যা পুলিশের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জনবলসংকটের কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাহায্যকারী ফোর্স নিয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ২ লাখ ৩০ হাজারে কিছু বেশি সদস্য রয়েছেন। ডিএমপি পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট, যেখানে রয়েছেন ৩৫ হাজার পুলিশ সদস্য। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিএমপিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আনা হয় বেশির ভাগ সদস্যকে।

অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যদের আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা মনে করছেন, শুরুতেই অপেশাদার ও অপরীক্ষিত এই সদস্যদের আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলে মানুষ হয়রানির শিকার হতে পারেন। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বেসরকারি চাকরিজীবী রিফাত আজীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া, পরিকল্পনাহীনভাবে এমন ফোর্স নিয়োগ তেমন কাজে আসবে না। যেখানে পেশাদার পুলিশ বাহিনী অতীতে মানুষকে অনেক হয়রানি করেছে, সেখানে অপেশাদার সদস্যরা তা করবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

শাহবাগে মোতালেব নামের এক পথচারী বলেন, সাহায্যকারী ফোর্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের উচিত পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। তা না করে এই ফোর্স নিয়োগ নতুন একটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

অক্সিলারি ফোর্সকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টিকে পুলিশ সদস্যরাও সঠিক বলে মনে করছেন না। ডিএমপির রমনা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী উপপরিদর্শক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নতুন হলেও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে গিয়েও আমাদের ভুল হয়, সাধারণ মানুষ সমালোচনা করে। অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যরা যা করবে, সব দায় পুলিশ বাহিনীর ওপর পড়বে। বিষয়টি কতটা যৌক্তিক, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আবার ভাবতে পারেন।’

বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মোহাম্মদ নুরুল হুদাও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকমতো যাচাই-বাছাই না করে লোক নিয়োগ দিলে এর অপব্যবহারও হতে পারে। কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।