Image description

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এদিন বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সারজিস আলম।

এদিকে নতুন এই দলকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে দলটির শীর্ষ পদে কারা থাকছেন তা নিয়ে চলছে কানাঘোষা। জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ৬টি পদে কারা আসছেন, তা অনেকটাই চূড়ান্ত। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে ‘সমঝোতার’ ভিত্তিতে নতুন দুটি পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নামে দুটি পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসছেন। এই দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কোনো আপত্তি ছিল না। সদস্যসচিব হিসেবে কে আসবেন, মূলত তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সমঝোতার ভিত্তিতে এই পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব।

নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যে কোনো সময় অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে দেখা যেতে পারে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে।

 

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলী আহসান জোনায়েদের (শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি) নাম বিবেচনায় আছে। আর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নতুন দলে যুক্ত হতে যাওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

শীর্ষ ৬টি পদের বাইরে নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়, মাহবুব আলম ও অলিক মৃ। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।

এদিকে নতুন দলের বিষয়ে জনমত জরিপ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এ লক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির আওতায় জনমত জরিপ করা হচ্ছে। অনলাইনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতামত (প্রশ্নোত্তর) সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে রোববার বিকেল পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে সারজিস জানান, নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। সবচেয়ে বড় অনুধাবনটি হচ্ছে সেই ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের আমরা যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, এই জুলাই স্পিরিটকে সামনে রেখে। নতুন বাংলাদেশ যে জায়গায় কল্পনা করেছি, তা একটা দীর্ঘ লড়াই। হাজারো শহীদের জীবনের উপরে, অর্থাৎ লাখো ভাইবোনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে বাংলাদেশ‌, আগামী প্রজন্মকে সেই বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের কাছে একটি আমানত।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবার, দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর থেকে অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সবাই থাকবেন বলেও জানান তিনি।