Image description
♦পিলখানা হত্যাকান্ড ♦ হত্যা মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ♦ বিস্ফোরক মামলা এখনো নিম্ন আদালতেই

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহের ১৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৯ সালের এই দিনে হঠাৎ গুলি ও বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানী। সেদিন পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দপ্তর রক্তাক্ত করে ওই বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। টানা দুই দিন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। পিলখানা বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর লোগো এবং পতাকা। এ বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার দুটি ধাপ পার করেছে। আসামির সংখ্যা ও মৃত্যুদন্ডের দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলা বিচারিক আদালত ও হাই কোর্ট হয়ে এখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আপিল বিভাগে বিচারাধীন। প্রতি সপ্তাহে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয় না।

বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা অপর মামলার বিচারকাজ চলছে ঢিমেতালে। ঘটনার ১৬ বছর পার হলেও এখনো নিম্ন আদালতই পেরোতে পারেনি মামলাটি। ১২৬৪ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন। ওই রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় রায়ে ২৭৭ জনকে খালাস দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মধ্যে ১৪ জন পলাতক। এ ছাড়া বন্দি অবস্থায় তোরাব আলীসহ দুই আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রাখেন। এ রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন হাই কোর্ট। খালাস পান ৪৯ আসামি। পরে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি ১১ দফা পর্যবেক্ষণসহ হাই কোর্ট ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় (ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি করে) প্রকাশ করেন। রায়ে মামলার প্রেক্ষাপট, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও নৃশংসতার চিত্রও তুলে ধরা হয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০৩ আসামির পক্ষে ৪৮টি আপিল আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়।

হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাই কোর্টের রায়ের পর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে সরাসরি আপিল এবং অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই এ-সংক্রান্ত আপিল আবেদনগুলো শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসছে। তবে তালিকার নিচের দিকে থাকার জন্য শুনানি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এ মামলাটি আসামির সংখ্যা ও মৃত্যুদন্ড বিবেচনায় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। এ ধরনের মামলায় বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে শুনানি হওয়া জরুরি। প্রধান বিচারপতি মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেই আশা করি। বিস্ফোরক মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল, সাক্ষী ও আসামি একই হওয়ায় দুটি মামলায় একসঙ্গে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে আসামিপক্ষের আবেদনে মামলা দুটির বিচারকাজ পৃথকভাবে চলে। তিনি বলেন, মামলাটিতে এ পর্যন্ত ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আমরা জানি না প্রায় ১৩০০ সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ কত দিনে শেষ করতে পারবে? এ ১৬ বছরেও এ মামলার বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব হলো না। বিডিআরের মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন জানান, বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় এ পর্যন্ত ১৭৮ জন বিডিআর সদস্যের জামিন হয়েছে। আরও ৪৬২ জন বিডিআর সদস্যের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাদের জামিন বিষয়ে শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৩ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত ২৮৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন, আগামী তারিখে আরও সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলাটির বিচার চলছে বলে জানান তিনি।